বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যা করে একজন মানুষ মারা যায়৷ অর্থাৎ
প্রতিদিন ২০০০-এর বেশি মানুষ আত্মহনন করে৷ এটা প্রতিরোধ করা কি সম্ভব? এই
প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা৷ আত্মহত্যা সমাজে এখনও এক নিষিদ্ধ বিষয়৷
বন্ধুবান্ধব বা আত্নীয়স্বজন আত্মহত্যা করলে বিষয়টি অনেকের কাছে অস্বস্তিকর
মনে হয়৷ প্রশ্নটি কোনোভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে চান তাঁরা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একেক দেশে আত্মহত্যার কারণও একেক রকম৷‘ ‘সাধারণত
গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রের কারণে, যেমন জীবিকার ভিত হারিয়ে গেলে কীটনাশক খেয়ে
অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷''বলেন ডাব্লিউএইচও-র ইউরোপীয় দপ্তর প্রধান
মাথিসমুইয়েন৷ কীটনাশক অত্যন্ত বিষাক্ত এই কীটনাশক কৃষিখেতে ব্যবহার করা হয়৷
বিষক্রিয়া হতে হতে কয়েকদিনও লেগে যায়৷ কিন্তু তা ঠেকানো আর সম্ভব হয় না৷
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, উত্তর
কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি৷ পূর্ব ইউরোপ তথা রাশিয়াতেও
আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনক৷ সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে
এই পথ বেছে নেন অনেকে৷ অনেক দেশে আত্মহত্যা বেআইনি৷ ডাব্লিউএইচও-এর
রিপোর্টে বলা হয় বিভিন্ন দেশের সরকার উদ্যোগ নিলে আত্মহত্যার হার হ্রাস করা
যায়৷ আত্মহত্যা সম্পর্কে ২০১২ সালের পরিসংখ্যান পুরুষদের সংখ্যা বেশি
জার্মানিতে বেশিরভাগ আত্মহত্যাই সংঘটিত হয় গলায় ফাঁস লাগিয়ে৷ ১০ হাজারের
মধ্যে ৪,০০০ জনই এইভাবে আত্মহনন করেন৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ খেয়ে
মৃত্যু বরণ করা৷ আর এরপরের স্থানে রয়েছে গাড়ি বা ট্রেনের নীচে চাপা পড়ে
আত্মহত্যা করা৷ জার্মানিতে মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার চারগুণ
বেশি৷ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণই হলো আত্মহত্যা,
মাদকসেবনের কারণে ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারের চেয়েও বেশি৷ প্রবীণদের
ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক৷ তাদের অনেকেই শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে
মানসিক অসুস্থতা ও ডিপ্রেশনেও ভোগেন৷ অনেকে নিঃসঙ্গ৷ তাই আত্মহত্যা ছাড়া
আর গতি দেখেন না অনেকে৷ সচেতনতা বাড়ানো উচিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে
হলে প্রথমে বৃদ্ধি করতে হবে সচেতনতা৷ ভূক্তভোগীকে নিঃসঙ্গতা কাটাতে সাহায্য
করতে হবে৷ ডিপ্রেশন যে অস্বাভাবিক কিছু নয় সেটা বুঝতে দিতে হবে৷ সাহায্য
দেওয়া হতে পারে হটলাইনের মাধ্যমে৷ ট্রামে বাসে ও বিভিন্ন স্থানে
প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে৷ বিশেষ করে
চিকিত্সকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ লক্ষ্য করা গিয়েছে আত্মহত্যার আগে অনেকে
সাহায্যের জন্য ডাক্তারের কাছে যান৷ কিন্তু তাদের মানসিক যন্ত্রণা সঠিকভাবে
বুঝতে পারেন না অনেক চিকিত্সক৷ বলেন ডাব্লিউএইচও-এর মাথিস মুইয়েন৷ এছাড়া
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে৷ উঁচু
দালানকোঠায় গ্রিল বা বেড়া দিয়ে ঘের দিলে আত্মহত্যা অনেকটা প্রতিরোধ করা
যায়৷ এই মত বিশেষজ্ঞদের৷ দেখা গেছে, একবার সফল না হলে অনেকে আর আত্মহননের
চেষ্টা করেন না৷ ধাক্কাটা সামলে ওঠেন৷ অন্যদিকে মিডিয়ারও এক্ষেত্রে বড়
ভূমিকা রয়েছে৷ তাদের এমনভাবে খবর প্রচার করা উচিত নয়, যাতে দুর্বলচিত্তের
মানুষরা আত্মহত্যায় প্রণোদিত হয়৷
Comments
Post a Comment
আপনার ভালো কমেন্টের জন্য লেখক কে আরো সুন্দর পোস্ট লিখতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।