বেহেশতের পরিচয়

যে সকল লোক মহান আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)- এর উপর পূর্ণ বিশ্বাস  স্থাপন করে কোরআন ও হাদীসের নির্দেশানুযায়ী জীবন গড়ে তোলে এবং স্বীয় নফস ও কুচক্রী শয়তানের চক্রান্ত হতে বেঁচে থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে, যে সকল লোকের জন্য পরম করুণাময় আল্লহ রাব্বুল আলামীন পরকালের জীবনে চির সুখময় পরম আনন্দদায়ক এক বাসস্থানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, কোরআন শরীফের ভাষায় তাকে জান্নাত বা বেহেশত বলা হয়।
জান্নাত আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ গোপন বা অদৃশ্য ঘন ছায়াময় বাগান। ইসলামী পরিভাষায়, আল্লাহ পাক নেক্কার বান্দাদের জন্য যে শান্তিময় বাসস্থান সৃষ্টি করে রেখেছেন তাকে জান্নাত বা বেহেশত বলা হয়। সে স্থানটি মানুষের দৃষ্টি হতে অদৃশ্য এবং লতাবৃক্ষ দ্বারা অচ্ছাদিত, তাই তাকে জান্নাত বলা হয়। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমান বিলগায়বের অন্তর্ভুক্ত।
হাদীসঃ- হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ফরমান, আমি আমার পুন্যবান বান্দাদের জন্য আমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি জা কখনও কোন চক্ষু দেখেনি, কখন কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনও কল্পনাও করেনি। (তিনি বলেন,) এর সত্যতা প্রমাণে  তোমারা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতে পার-
বেহেশতের পরিচয়
বেহেশতের পরিচয়

উচ্চারনঃ- ফালা তা'লামু নাফসুম মা উখফিয়া লাহুম মিন কুররাতি আইউনিন।
অর্থঃ- এতদভীন্ন তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী আনন্দদায়ক যে সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে, কোন প্রানীরই তার খবর নেই।
হাদীসঃ-  হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতে  এমন একটি বিরাট বৃক্ষ আছে, যদি কোন সাওয়ারী সেটির ছায়ায় একশ' বছর পরিভ্রমন করে তবুও তার শেষ প্রান্তে পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। বেহেশতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও এর চেয়ে উত্তম জার সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায় (অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবী হতে)।- (বোখারী ও মুসলিম)।
হাদীসঃ-  হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন, বেহেশতে একটি চাবুক রাখার পরিমাণ জায়গা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে জা কিছু আছে তা হতে উত্তর। (বোখারী ও মুসলিম)
হাদীসঃ-হযরত ওয়াহাব (রাঃ) বর্ণনা করেন- আল্লহর ইচ্ছানুযায়ী যথা সময় বেহেশত সৃষ্টি হয়েছে। নভোমণ্ডলের ও ভূমন্ডলের বিস্তৃতি অনুযায়ী তিনি তার প্রস্থ নির্ধারণ করেছেন। জান্নাতের দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে কেউই অবগত নয়। কেয়ামতের পর তার বিস্তৃতি আরো বর্ধিত করা হবে যেন বেহেশতবাসী তাতে পরমানন্দে বসবাস করতে পারে। বেহেশতের দরজা একশ'; একটি হতে অন্যটির দূরত্ব পাঁচশ বছরের পথের সমান। তাতে কুলকুল রবে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। বৃক্ষের ফলসমূহ নাগালের মধ্যে ঝুলে থাকবে যেন জান্নাতীরা ইচ্ছানুযায়ী খেতে পারে।
বেহেশতের হুরে ঈন- বড় বড় চক্ষুবিশিষ্টা পবিত্র রমনী থাকাবে। আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তারা ইয়াকুত ও মারজানের তুল্য লাবণ্যময়ী সুন্দরী। তারা স্ব-স্ব  স্বামী ভিন্ন অন্য কারও দ্বারা স্পর্শিতা হবে না। তাদের সাথে যতই সঙ্গম করা যাবে ততই তাদেরকে নবরত ও কুমারী মনে হবে। তাদের দেহে বিভিন্ন রংয়ের সত্তরটি অলংকার থাকবে। তা একটি পশমতুল্যও ভারী হবে না। তাদের হাত এবং হাড় অলংকেরের ভিতর দিয়ে দেখা যাবে। তাদের কেশগুচ্ছ ইয়াকুত ও মুক্তা খচিত হবে।- (হে আল্লাহ! আমাদেরকে উত্তম রিজিক দান করুন আমীন।)
হাদীসঃ-হযরত আবু মূসা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ বেহেশতে মোমেনদের জন্য মুক্তা দ্বারা প্রস্তুত একটি তাঁবু থাকবে, যার মধ্যস্থল হবে ফাঁকা, তার দৈর্ঘ্য ষাট মাইল। প্রত্যেক কণে থাকবে তার পরিবার। এক কোণের লোককে দেখতে পাবে না। ঈমানদারগণ এদের নিকট যাতায়াত করবে। দু'টি বেহেশত হবে রুপার। এর ভিতরের পাত্র ও অন্যান্য সামগ্রী হবে সোনার। যার পাত্র ও ভিতরের সব জিনিস হবে সোনার। আর আদন বেহেশতে বেহেশতবাসী এবং তাদের পরওয়ারদেগার দর্শন লাভের মাঝখানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আভা ছাড়া এর কোন আড়াল থাকবে না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদীসঃ-হযরত জাবের (রাঃ) বলেন। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, জান্নাতবাসীগণ তথায় পানাহার করেবে, কিন্তু থুথু ফেলবে না, মল্মুত্র ত্যাগ করবে না এবং নাক হতে শ্লেষ্মা ঝরবে না। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করেন, আমতাবস্থায় তাদের খাদ্যের পরিণতি কি হবে? তিনি বললেন, ঢেকুর এবং মেশকের ন্যায় সুগন্ধি ঘামের দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর তসবীহ ও প্রশংসা তাদের অন্তরে আমনভাবে ঢেলে দেয়া হবে যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস অবিরাম চলে।
হাদীসঃ-হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, সায়হান, জায়হান, ফোরাত ও নীল- এগুলো জান্নাতের নহর। -(মুসলিম শরীফ)

  সূত্রঃ (মৃত্যুর আগে ও হাসরের পরে, পৃঃ 125-127)

বাকি পর্ব গুলো পড়ুন




Comments