৫টি বেশ কাজের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। মনেহয় আপনার মোবাইলে ও থাকা উচিত।

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে গুগল প্লে স্টোরে থাকা হাজার হাজার অ্যাপ্লিকেশনের বাহার। আপনিই জানবেনই না এসব অ্যাপ্লিকেশনের কোনো কোনোটা আপনার কতোটা কাজে আসবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সেটি ব্যবহার করছেন। এই বিশাল অ্যাপ্লিকেশনের ভাণ্ডার থেকে কাজের অ্যাপ্লিকেশনটি খুঁজে বের করা ব্যস্ত মানুষের জন্য বেশ শক্ত কাজ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আমরা অ্যান্ড্রয়েড কথনে প্রায়ই বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের রিভিউ ও তালিকা প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।
আজ আসুন জেনে নিই ৫টি স্বল্প পরিচিত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের কথা যেগুলো সত্যি সত্যিই অত্যন্ত কাজের। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো একবার ব্যবহার করলে তারপর ভাববেন এতোদিন কীভাবে এগুলো ছাড়া চলেছেন! চলুন শুরু করা যাক।

প্রে

প্রে
প্রে মূলত একটি ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন। প্রে ইনস্টল করার পর আপনি আর সবার মতোই আশা করতে থাকবেন যেন এটি ব্যবহারের প্রয়োজন না হয়। প্রে এর কাজ হচ্ছে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে এটি ফোন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনার কাছে পাঠাতে থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে ফোনের বর্তমান অবস্থান যা একটি ম্যাপে দেখানো থাকবে, ফোনের বিভিন্ন তথ্য, যেই সিম কার্ড চালু রাখা হয়েছে তার নম্বর ইত্যাদি। আপনি চাইলে দূর থেকেই আপনার ফোন সম্পূর্ণ লক করে দিতে পারেন। ফলে যার কাছে ফোনটি থাকবে তিনি বাস্তবিকই আর কিছুই করতে পারবেন না।
প্রে অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনে কাজ করে। এটি আপনি আপনার ল্যাপটপেও ব্যবহার করতে পারবেন। বিনামূল্যের অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ৩টি ডিভাইস ট্র্যাক করা যায়। এটি সেটআপ সম্পন্ন হওয়ার পর যখনই সিম পরিবর্তন করা হবে, তখনই নতুন সিমের নম্বরটি আপনার আগে থেকে ঠিক করে দেয়া নম্বরে এসএমএস করে পাঠাবে প্রে। আপনার একটি কোড থাকবে যেই কোডটি লিখে সেই নাম্বারে এসএমএস পাঠালেই চুপি চুপি জেগে উঠবে প্রে। এরপরই শুরু হবে এর ডেটা কালেকশন যা আপনার ইমেইলে প্রতি দশ মিনিট (বা নির্দিষ্ট বিরতির পরপর) পাঠাতে থাকবে প্রে।
প্রে অত্যন্ত কাজের একটি অ্যাপ্লিকেশন। এটি এতোটাই দরকারী যে আমরা ভবিষ্যতে কেবল প্রে নিয়ে আলাদা একটি টিউটোরিয়াল করবো ভাবছি। ততোদিন অপেক্ষা করুন অথবা আজই প্রে ইনস্টল করে নিজেই চেষ্টা করতে শুরু করুন।
গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ প্রেপ্রে

সলিড এক্সপ্লোরার

সলিড এক্সপ্লোরার
অ্যান্ড্রয়েডে ডিফল্ট অবস্থায় তেমন কোনো ফাইল এক্সপ্লোরার দেয়া থাকে না। ফলে মেমোরি কার্ডে কোনো কপি-পেস্ট বা এ জাতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হলে প্রথমেই আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। কিন্তু সলিড এক্সপ্লোরার একটি সত্যিই অসাধারণ একটি ফাইল এক্সপ্লোরার যা দিয়ে আপনার মেমোরি কার্ডের ফাইলগুলো দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনমতো কাট-কপি-পেস্টের কাজ করতে পারবেন।
সলিড এক্সপ্লোরারের একটি বিশেষ সুবিধা হলো এটি ল্যান্ডস্কেপ মোডে পাশাপাশি দু’টি ব্রাউজার এনে দেয়। ফলে একটি লোকেশন থেকে অন্য লোকেশনে ফাইল বা ফোল্ডার ট্রান্সফার করা যায় ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ পদ্ধতিতেই।
সাধারণ অবস্থায় সলিড এক্সপ্লোরার দিয়ে মেমোরি কার্ডের কন্টেন্ড দেখা গেলেও যদি আপনার ফোন রুট করা থাকে বা সুপারইউজার পারমিশন থাকে, তাহলে সলিড এক্সপ্লোরার দিয়ে আপনি রুট ফোল্ডারগুলোও ব্রাউজ এবং বিভিন্ন অপারেশন করতে পারবেন।
আপনার ফোনে কোনো ফাইল এক্সপ্লোরার থাকুক বা না থাকুক, সলিড এক্সপ্লোরার অন্তত একবারের জন্য হলেও আপনার এখনই ব্যবহার করে দেখা উচিৎ।
গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ সলিড এক্সপ্লোরারসলিড এক্সপ্লোরার

ডলফিন ব্রাউজার এইচডি

ডলফিন ব্রাউজার এইচডি
ফিচার ফোন ব্যবহার করার সময় আমরা অপেরা মিনি ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। স্মার্টফোনে এসেও কি ঠিক তাই করবো? স্মার্টফোনে অপেরা মিনি রাখুন বা না রাখুন, ডলফিন ব্রাউজার এইচডি এমন একটি ব্রাউজার যেটি না থাকলে আপনার অ্যান্ড্রয়েডে ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্সই অপূর্ণ থেকে যাবে। এর ইউজার ইন্টারফেস, দ্রুতগতি এবং আধুনিক সব বৈশিষ্ট্য মাত্র এক ঘণ্টায়ই আপনার মন জয় করে নিতে সক্ষম।
ডলফিন ব্রাউজার এইচডি-র প্রধান সুবিধা হচ্ছে জেসচার কন্ট্রোল। ব্রাউজারটি চালু থাকা অবস্থায় নিচের কোণ থেকে জেসচার মোড চালু করে স্ক্রিনে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে f লিখলে দেখবেন মূহুর্তেই চলে আসবে ফেসবুক! একইভাবে G লিখলে আসবে গুগল, > আঁকলে ফরওয়ার্ড আর < আঁকলে যাবে ব্যাক-এ। এভাবে পছন্দমতো সাইটের জন্য আলাদা আলাদা টাচ জেসচার যোগ করে নিতে পারবেন। এছাড়াও এতে ভয়েস কন্ট্রোল রয়েছে যার মাধ্যমে কথা বলেই ব্রাউজিং-এর কাজ সেরে নিতে পারবেন। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষের উচ্চারণ স্থানীয় ইংরেজ বা আমেরিকানদের মতো হয় না বলে ভয়েস সেবা প্রায়ই আমাদের কথা ঠিকমতো বুঝতে ব্যর্থ হয়। তবুও চেষ্টা করে দেখতে পারেন যদি আপনার কথা বোঝে!
ডলফিন ব্রাউজার এইচডি-তে আরও রয়েছে বিভিন্ন অ্যাড-অন। এর অ্যাড-অন গ্যালারি থেকে যেভাবে আপনি এর ফাংশনালিটি বাড়াতে পারবেন সেভাবে একে সাজিয়েও নিতে পারবেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী। তাই আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা ট্যাবলেটে ডলফিন ব্রাউজার এইচডি অবশ্যই ইনস্টল করুন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন আপনি নিজেই এই ব্রাউজারকে ডিফল্ট হিসেবে সেট করে ফেলছেন!
গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ ডলফিন ব্রাউজার এইচডিডলফিন ব্রাউজার

গুগল গগলস

গুগল গগলস
গগলস শব্দের অর্থ চশমা। আর গুগল গগলস হচ্ছে গুগলের চশমা। আপনার ফোনের ক্যামেরাকে গুগলের চশমা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফলে কোনো কিছু নিয়ে সার্চ করতে হলে টাইপ না করে কেবল ছবি তুলেই সার্চের কাজ করতে পারবেন।
এখানে বলা বাহুল্য, গুগল গগলস কেবল বইয়ের অংশ সার্চ করতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ছবি চিনতে পারে। তাই সবকিছু খোঁজার জন্য গুগল গগলস খূব একটা কাজে নাও আসতে পারে। তবে সবচেয়ে কাজে আসবে যেই কাজে সেটা হলো কিউআর কোড রিড করতে।
ইন্টারনেটের অনেক সাইটেই এই কিউআর কোড দেয়া থাকে। প্রযুক্তি কথনেও প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশন বা গেমের লিংকের পাশে কিউআর কোড দেয়া থাকে। এর সুবিধা হচ্ছে আপনার মোবাইলে থাকা স্ক্যানার অ্যাপ্লিকেশন চালু করে (এই ক্ষেত্রে গুগল গগলস) ক্যামেরাটি কম্পিউটার স্ক্রিনের কিউআর কোডের দিকে তাক করে ছবি তুললে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি সেই লিংকটিতে যেতে পারবেন। লিংকটি যদি ইউটিউব ভিডিও হয় তাহলে ব্রাউজারের বদলে ইউটিউব অ্যাপ্লিকেশন চালু হবে আবার যদি প্লে স্টোরের লিংক হয় তাহলে চালু হবে প্লে স্টোরের অ্যাপ্লিকেশন।
গুগল প্লে স্টোর লিংসঃ গুগল গগলসগুগল গগলস

অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি

avast mobile security
নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বরাবরই উদাসীন। এ জন্য অনেকেই টাকা দিয়ে জেনুইন অ্যান্টিভাইরাস বা ইন্টারনেট সিকিউরিটিও কিনতে চাই না। তবে মোবাইলের জন্য যতটুকু নিরাপত্তা প্রয়োজন তা দিতে পারে অ্যাভাস্টের বিনামূল্যের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ্লিকেশনটি। এর মাধ্যমে আপনি কোন অ্যাপ্লিকেশন ফোনে কতটুকু প্রসেস বা ব্যাটারি টানছে, কোন অ্যাপ্লিকেশন কোন কোন অ্যাপ (যেমন ক্যামেরা, ফোনবুক ইত্যাদি) ব্যবহার করছে ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড মার্কেট ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করলে সেটি নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা করার জন্যও অ্যাভাস্ট বেশ কাজের। সেই সঙ্গে আপনার মেমোরি কার্ডে যখন কারো কম্পিউটার থেকে গান বা অন্যান্য ফাইল ঢোকাবেন, সেগুলোও চাইলে ভাইরাস বা অন্যান্য ক্ষতিকার প্রোগ্রামের জন্য স্ক্যান করে নিতে পারবেন।
চুরি গেলে সেটের অবস্থান জানার জন্য রয়েছে অ্যাভাস্টের অ্যান্টি-থেফট সুবিধা। এর মাধ্যমে সিম কার্ড পরিবর্তন করা হলে সেই কার্ডের নাম্বার প্রাপ্তি, মোবাইলের বর্তমান অবস্থান ইত্যাদি তথ্য জানা সম্ভব। তবে এই কাজে ব্যক্তিগতভাবে প্রে আমার বেশি পছন্দ ও কার্যকর মনে হয়েছে বলে আমার সেটে অ্যাভাস্টের অ্যান্টি-থেফট অপশনটি বন্ধ রাখা আছে। আপনি চাইলে এটি নিয়ে কাজ করে দেখতে পারেন।
গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটিঅ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি
অ্যান্ড্রয়েড মার্কেট বা গুগল প্লে স্টোরের হাজার হাজার অ্যাপ্লিকেশন থেকে কোনটি আপনার সত্যিই কাজে লাগবে তা খুঁজে বের করা সত্যিই দুঃসাধ্য কাজ। তবে উপরের অ্যাপ্লিকেশনগুলো সবারই কাজে লাগবে বলে আমি মনে করি। এমন কোনো অ্যাপ্লিকেশন যদি আপনার সেটে থাকে যার কথা আমরা এখনও বলিনি, তাহলে অবশ্যই তা সম্পর্ক আমাদের জানান মন্তব্যের ঘরে।

Comments