আসুন জানি আমাদের শরীরে কখন জ্বর হয়

সহজ কথায় জ্বর মানে হল, দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭.৫-৯৯.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট। অর্থাৎ ৯৯.৫ ডিগ্রীর উপরে দেহের তাপমাত্রা স্থির থাকাটাই প্রচলিত ভাষায় জ্বর। জ্বরকে অবশ্য ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় Pyrexia বা পাইরেক্সিয়া। কারন দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানে হলো- দেহে পাইরোজেন উৎপন্ন হয়েছে।
Humanfever

এখন পাইরোজেন কি ?
পাইরোজেনকে বলা হয় এক ধরণের তাপ জীবাণু ঘটিত বিষ। এর প্রধান কাজ হলো বাইরে থেকে জীবাণুরা আমাদের আক্রমণ করলে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাইরোজেন যখন এই চেষ্টা করে তখন শরীরের হরমোন, এনজাইম ও রক্তকণিকাদের (মূলত শ্বেতকণিকা) খুব দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে যাতে করে বাইরের শত্রুদের ঠেকানো সম্ভব হয়। শত্রুরা আমাদের দেহে আক্রমণ করলে আমাদের দেহ থেকে প্রচুর পাইরোজেন নিঃসৃত হতে থাকে। পাইরোজেন আমাদের দেহের সব জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে জীবাণুদের মারতে শুরু করে।
এজন্য পাইরোজেন রক্তের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই রক্তের মাধ্যমে কিছু কিছু পাইরোজেন আবার পৌঁছে যায়, আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অঞ্চলে। হাইপোথ্যালামাস পাইরোজেনের সংস্পর্শে এলেই মস্তিষ্কের ভেতরের দিকের আর একটা অঞ্চল ‘ভেসোমোটর’-এ সংকেত পাঠায় যে, দেহে শত্রুরা আক্রমণ করেছে।
ভেসোমোটর করে কি, দেহের সব লোমকূপ দেয় বন্ধ করে, যেন আর বাড়তি কোন জীবাণু ঢুকতে না পারে। সেই সাথে আমাদের রক্তনালীগুলোকেও সংকুচিত করে দেয়, যেন পাইরোজেন সহজেই জীবাণুদের ধরে ধরে মারতে পারে। রক্তনালী সংকুচিত হলে রক্ত প্রবাহের গতি যায় বেড়ে, ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় তাপ। সাথে আমাদের দেহে ক্রমাগত কিছু তাপ তো উৎপন্ন হচ্ছেই। লোমকূপ বন্ধ থাকার ফলে আমাদের দেহের ভেতরে যে তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, তা আর বের হতে পারে না। সবমিলিয়ে আমাদের দেহের তাপমাত্রাও যায় বেড়ে।
তার মানে দাঁড়ালো জ্বর আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারই একটি আপদকালীন প্রতিক্রিয়া! সেই সাথে এও বুঝা গেলো জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র! সেটা হতে পারে ছোটোখাটো কোনো অসুখ কিংবা বড়সড় কিছুর!
তাই জ্বরকে মোটেই অবহেলা নয়।

নিচের পোস্ট গুলি ও দেখতে পারেন......  

Comments