আত্মা কবযের পদ্ধতি - মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে ২

আত্মা কবযের পদ্ধতি

হযরত মোকাতেল (রঃ) থেকে বর্ণিত- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত
আযরাঈল (আঃ) - এর জন্য সপ্তম আসমানে, কারো মতে চতুর্থ আসমানে সত্তর হাজার
খুঁটির উপর নূরের একটি সিংহাসন তৈরি করেছেন। তার দেহে চারটি পাখা,সারা
শরীরে সকল প্রাণীর সংখ্যানুপাতে চোখ ও জিহ্বা আছে।

একদিন হুযুর আকরাম (সঃ) এরশাদ করলেন- মালাকুল মউতের ডানে-বামে,
উপরে-নীচে এবং সামনে- পিছনে ছয়খানা মুখ আছে। উপস্থিত সাহাবাগন আরয
করলেন,হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ছয়খানা মুখ কেন? এরশাদ হল- ডান পাশের মুখ
দিয়ে পাশ্চাত্যের আর বাম পাশের মুখ দ্বারা প্রাচ্যের,পিছনের মুখ দিয়ে পাপীদের আর
উপরের মুখ দ্বারা আকাশবাসীর এবং নীচের মুখ দ্বারা দৈত্য - দানবের আত্মা সংহার
করেন। হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন-মালাকুল মউত চোখ দ্বারা প্রাণীর প্রতি
দৃষ্টিপাত করেন এবং হাত দ্বারা আত্মা কবয করেন। এভাবেই তিনি সকল জীবের প্রাণ
সংহার করে থাকেন। কোন প্রাণীর মৃত্যু হওয়ার সাথে সাথে আযরাঈল (আঃ)-এর
দেহস্থিত একটি চোখ খসে পড়ে। 

আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে- হযরত আযরাঈল (আঃ) চার মুখবিশিষ্ট। মাথার
উপরের মুখ দ্বারা নবী ও ফেরেশতাদের আত্মা, সামনের মুখ দ্বারা মোমেন বান্দাদের
আত্মা, পেছনের মুখ দ্বারা দোযখীদের এবং পদতলস্থ মুখ দ্বারা দৈত্য- দানব,জ্বিন ও
শয়তানের প্রাণ সংহার করেন। তার একটি পা দোযখের উপরস্থিত পুলসেরাতের উপর,
আরেকটি বেহেশতে অবস্থিত সিংহাসনের উপর। বর্ণিত আছে- তার দেহ এত বিরাট
যে, পৃথিবীর সকল নদী- নালা, সাগর- সমুদ্রের সব পানিও যদি তার মাথায় ঢেলে দেয়া
হয়, তবুও এক ফোঁটা পানি মাটিতে পড়বে না।তার সামনে পৃথিবীর আত্মাসমূহ
এতই ক্ষুদ্র- যেন বিভিন্ন খাদ্যে পরিপূর্ণ একটি থালা এর সামনে রাখা হয়েছে। আর
তিনি যা ইচ্ছা উঠিয়ে মুখে দিচ্ছেন। তিনি এই পৃথিবীকে এমনভাবে ওলট- পালট
করেন যেমন তামার একটি পয়সা আমার হাতের তালুতে নাচিয়ে ওলট- পালট করে
থাকি।

একমাত্র নবী- রাসূলদের আত্মা সংহার করা। ছাড়া আর কারো জন্য তিনি সরাসরি
পৃথিবীতে আসেন না। অন্যান্য প্রাণী প্রাণ সংহারের জন্য তাঁর বহু সহকর্মী রয়েছে। সকল
সৃষ্টির আত্মা সংহারের পর হযরত আযরাঈল (আঃ) -এর শরীরে মাত্র আটটি চোখ
বাকী থাকবে। অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল, মীকাঈল, ইসরাফীল,স্বয়ং আযরাঈল (আঃ)
এবং আরশ বহনকারী চার জন ফেরেশতা তখনও জীবিত থাকবেন।

হযরত আযরাঈল (আঃ) কিভাবে বুঝতে পারেন যা, মানুষের মৃত্যুর সময় এসে
গেছে, এ বিষয়ে বর্ণিত আছে, যখন কোন জীবের মৃত্যুর আদেশনামা উপস্থাপন করা
হয় তখন তিনি বলেন- হে আল্লাহ! আমি এখন কিভাবে এবং কোথায় তোমার এ
বান্দার প্রাণ হরণ করব? আল্লাহ এরশাদ করবেন- হে আযরাঈল,মৃত্যুর গোপনীয়তা
আমার নিকট সংরক্ষিত। আমি ছাড়া আর কেউ সে সংবাদ সম্পর্কে কিছুই জানে না।
সময় ঘনিয়ে এলে আমি তোমাকে জানাব, আর তুমি তার নিদর্শনসমূহ দেখতে পাবে।
   যখন কোন বান্দার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তার শ্বাস- প্রশ্বাস
নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতা আযরাঈল (আঃ)- এর কাছে এসে বলেন- অমুকের পুত্র
অমুকের জীবিকা ও কাজকর্মের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপর হযরত আযরাঈল
(আঃ)- এর নিকট রক্ষিত বান্দার নামের তালিকায় মোমেন বান্দার নামের চার দিকে
একটি উজ্জ্বল নূরের বৃত্ত সৃষ্টি হয়। আর পাপীদের নামের চার দিকে কাল বর্ণের রেখা
ফুটে উঠে। সর্বশেষ আরশের নিম্নস্থ প্রকাণ্ড বৃক্ষ হতে বান্দার নাম দেখে বান্দার প্রাণ হরণ
করেন।
   হযরত কাব ইবনে (রাঃ) বলেন, আরশের নীচে প্রকাণ্ড একটি বৃক্ষ
আছে।সে বৃক্ষে জীবের সংখ্যানুসারে পাতা রয়েছে। মৃত্যুর চল্লিশ দিন পূর্বে মৃত্যুপথযাত্রী
ব্যক্তির নামাঙ্কিত পত্রটি আযরাঈল (আঃ)- এর বুকের উপর ঝড়ে পড়ে। তিনি তার
সহকর্মীদেরকে নির্দিষ্ট  দিনে ঐ ব্যক্তির আত্মা কবয করার নির্দেশ দেন। মৃত্যুর চল্লিশ
দিন পূর্বেই  ঐ ব্যক্তিকে আকাশে মৃত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বর্ণিত আছে, হযরত
মীকাঈল (আঃ)  আল্লাহর নিকট থেকে একটি ছোট বই হযরত আযরাঈল (আঃ) -এর
কাছে নিয়ে আসেন। উক্ত পুস্তিকায় মৃত ব্যক্তির নাম-ধাম, মৃত্যুর স্থান ও কারণ
বিস্তারিত ভাবে লেখা থাকে।
    হযরত আবুল লাইস সমরকন্দী (রহঃ) বলেন- কারো মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে
আসলে আরশের নিম্নদেশে হতে একবিন্দু সাদা বা সবুজ রংয়ের পানি তার নামের উপর
ঝড়ে পড়ে। মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি মোমেন ও নেককার হলে তার নামের উপর সবুজ
ফোঁটা পতিত হয়।
সুত্রঃ মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে পৃষ্ঠা ১২-১৩

যারা আগের পস্টটি পড়েননি তারা পড়তে পারেন
মৃত্যু সৃষ্টির রহস্

Comments