অর্থঃ যে মুসলমান মৃত্যুশয্যায় শায়িত তার কাছে থেকে তাকে কালেমা 'লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ' তালকীন কর এবং তাকে বেহেশ্তের সুসংবাদ দাও। কেননা, ঐ
কঠিন সময়ে বড় বড় জ্ঞানী পুরুষ মহিলা হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। আর
ঐ সময় শয়তান মানুষের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে।
(কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড পৃঃ ৭৮)
অর্থঃ মৃত্যুশয্যায় শায়িত লোকদের কাছে থাক এবং তাদেরকে আল্লাহর নাম
স্মরণ করাও। কেননা, তারা যা দেখছে তা তোমরা দেখ না।
(ইবনে আবিদ দুনিয়া ফী ফিতাবিল মোখতাসার)
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বর্ণনা করেন, যখন আল্লাহ তাআলা হযরত আদম ও
হাওয়া (আঃ)- কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন- সাথে সাথে ইবলীস শয়তানও উৎসব
পালন করার জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করে এবং বলতে থাকে- যখন আমি মানুষের
পিতা- মাতাকে ধোকা দিয়ে ফেলেছি, তাদের সন্তান তো তাদের থেকেও দুর্বল; সুতরাং
তাদেরকে প্রলুব্ধ করা কোন কষ্টের কাজ নয়। ইবলীসের এ ধারণা সম্পর্কে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন-
উচ্চারণঃ ওয়ালাকাদ সাদ্দাকা আলাইহিম ইবলীসু জান্নাহু ফাত্তাবাঊহু ইল্লা
ফারীকাম মিনাল মোমেনীন।
অর্থঃ আর তাদের উপর ইবলীস তার অনুমান সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করল। পরে
তাদের মধ্যে মোমেনের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার পথ অনুসরণ করল।
(সূরা সাবা, আয়াত ২০)
এ প্রেক্ষিতে ইবলীস বলল, আমিও যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের আত্মা বাকী থাকে
ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে পৃথক হব না, তাদেরকে মিথ্যা অঙ্গীকার ও আশা
আকাঙক্ষা দিয়ে ধোকা দিতে থাকব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাদীসে
কুদসীতে এরশাদ করেন-
অর্থঃ আমার ইজ্জত ও জালালের কসম, আমিও মানুষের তওবা কবুল করা বন্ধ
করব না, যতক্ষণ সে মৃত্যুর পরগরায় না পৌছে। সে যখন আমাকে ডাকবে আমি তার
ফরিয়াদ কবুল করব। যখন আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দিব। যখন আমার নিকট
গোনাহ মাফের প্রার্থনা করবে আমি তাকে মাগফেরাত করব।
(ইবনে আবী হাতেম)
কোন কোন বর্ণনায় আছে, যখন মানুষের আত্মা সংহার করার সময় হয় তখন
দু'টি শয়তান তার ডানে ও বামে এসে বসে। ডান দিকেরটা মুমূর্ষ ব্যাক্তির পিতার
আকৃতিতে এসে তাকে বলতে থাকে- হে ছেলে! আমি তোমার প্রতিবেশী মেহেরবান
ও স্নেহশীল, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি খৃষ্টান হয়ে মারা যাও। কেননা,
তা উত্তম ধর্ম। আর বাম দিকের শয়তান মুমূর্ষ ব্যাক্তির মায়ের আকৃতিতে এসে বলবে-
হে ছেলে, আমি তোমাকে আপন উদরে রেখেছি, দুগ্ধ পান করিয়েছি, কোলে রেখে
লালন-পালন করেছি, অতএব আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তুমি ইহুদী ধর্ম গ্রহণ
করে মর। কারণ, তা উৎকৃষ্ট ধর্ম।
(মোখতাসার তাযকেরায়ে কুরতুবী)
ইমাম গাযালীও তাঁর কিতাবে আলোচিত বিষয়ের কাছাকাছি লেখেছেন-
মানুষের মুমূর্ষ অবস্থায় যে সময় আত্মা সংহারের কষ্টে বড় বড় জ্ঞানী ব্যাক্তির জ্ঞানও
অচল হয়ে যায়, তখন মানুষের সবচেয়ে বড় দুশমন শয়তান তার শিষ্যদেরকে নিয়ে
মুমূর্ষ ব্যাক্তির কাছে পৌছে। এসকল শয়তান মুমূর্ষ ব্যাক্তির বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন,
শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সৎ, নিষ্ঠাবান লোকদের আকৃতিতে এসে তাকে বলতে থাকে,
আমরা তোমার আগে মৃত্যুর এ ঘাঁটি অতিক্রম করেছি, মৃত্যুর উত্থান-পতন সম্পর্কে
তোমার চেয়ে আমরা বেশি জ্ঞান রাখি। এখন তোমার মৃত্যুর পালা এসেছে, আমরা
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী সুহৃদ হিসাবে পরামর্শ দিচ্ছি, তুমি ইহুদী ধর্ম গ্রহণ কর, তাই
উৎকৃষ্ট ধর্ম। যদি মুমূর্ষ ব্যাক্তি তাদের কথা না মানে, তখন অপর এক শয়তানের দল
অন্যান্য বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীর আকৃতিতে এসে উপস্থিত হয়ে বলে, তুমি খৃষ্টান
ধর্ম গ্রহণ কর। কেননা, তা ঐ ধর্ম যা হযরত মূসা (আঃ)- এর ধর্ম রহিত করে
দিয়েছে। শয়তান এভাবে প্রত্যেক ধর্মের বাতিল আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ মুমূর্ষ ব্যাক্তির
অন্তরে নিক্ষেপ করতে থাকে। ফলে যার ভাগ্যে সঠিক ধর্ম ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া
লেখা থাকে, সে ঐ সময় কিংসর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভ্রান্ত ধর্মমত গ্রহণ করে ফেলে। তাই
এর থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ পাক কোরআন করীমে এ দোআ শিক্ষা দিয়েছেনঃ
উচ্চারণঃ রাব্বানা লা তুযিগ্ কুলূবানা বা-দা ইয হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল
লাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হাব।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে
সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর।
তুমিই সব কিছুর দাতা।-
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮)
যে ব্যাক্তির উপর আল্লাহর মেহেরবানী হয়, তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
ইসলামের উপর অটল রাখেন এবং জিবরাঈল (আঃ)- এর সাথে আল্লাহর রহমত
অবতীর্ণ হয়ে শয়তানকে বিতাড়িত করতে থাকে। এর ঐ সময় মুমূর্ষ ব্যাক্তি অত্যন্ত
খুশীর সাথে বার বার মুচকি হাসি দিতে থাকে।
এক রেওয়ায়াতে আছে, জিবরাঈল (আঃ) ঐ সময় এসে বলেন, হে অমুক! তুমি
কি আমাকে চিনতে পারনি, আমি জিবরাঈল। এর এরা তোমার দুশমন শয়তান, তুমি
তাদের কথা শুনো না, স্বীয় দ্বীনে হানীফ শরীয়তে মুহাম্মদীর উপর অটল থাক। ঐ
সময়টা মুমূর্ষ ব্যাক্তির জন্য এমন মধুর হয় যে, কোন বস্তুই তাঁর চেয়ে অধিক প্রফুল্লতা
দানকারী ও আরামদায়ক হয় না। নিম্মের আয়াত এর প্রমাণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
এরশাদ করেনঃ
উচ্চারণঃ আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কানূ ইয়াত্তাকূনা লাহুমুল বুশরা ফিল হায়াতিদ
দুনইয়া ওয়া ফিল আখিরাহ।
অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য পার্থিব
জীবনে ও পরকালীন জীবনে সুসংবাদ।
(সূরা ইউনূস, আয়াত ৬৩)
Comments
Post a Comment
আপনার ভালো কমেন্টের জন্য লেখক কে আরো সুন্দর পোস্ট লিখতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।