সর্বদা আল্লাহর ভয় ও উচ্চ আশা থাকা উচিত














হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নবী করীম (সাঃ) এক
যুবকের কাছে তাশরীফ নেন। ঐ সময় যুবক মুমূর্ষাবস্থায় ছিলেন। হুযুর (সাঃ) তাকে
জিজ্ঞেস করলেন- তোমার অবস্থা কি?  সে বলল - আল্লাহর প্রতি ক্ষমার আশা রাখি,
আবার গোনাহের কারণে ভয়ও হয়। হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, মৃত্যুকালীন যার
মধ্যে এ দু'টি জিনিস পাওয়া যায়, আল্লাহ তাআলা তার আশা পূরণ করবেন এবং
তাকে ভয়- ভীতি থেকে নিরাপত্তা দিবেন।

           হাদীসঃ হযরত হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ
করেন, আল্লাহ তাআলা ফরমান, আমি আমার বান্দাদের উপর দু'প্রকারের ভয় একত্র
করব না; বরং দুনিয়াতে যে আমাকে ভয় করবে তাকে নিরাপত্তা দান করব।
আর দুনিয়াতে যে আমাকে ভয় করবে না তাকে পরকালে ভয়ে লিপ্ত করব।
          হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ফরমান, আল্লাহ এরশাদ করেছেন, বান্দা আমার
সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করবে আমিও  তার সাথে সেরূপ ব্যবহার করব। সুতরাং তার
ইচ্ছানুযায়ী সে ধারণা কুরক। সে যদি আমার সম্পর্কে ভাল ধারণা করে তবে তার
 জন্য মঙ্গল; আর যদি মন্দ ধারণা করে তবে তার জন্য অমঙ্গল।
                                                                -(নূরুসসুদূর, পৃঃ ১৯-২০)  

            হাদীসঃ হযরত মাআয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)
এরশাদ করেছেন- তোমরা যদি চাও তোমাদেরকে আমি খবর দিতে পারি যে,
 কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রতম মোমেনদের উদ্দেশ করে কি ফরমাবেন আর
তারা কি উত্তর দিবে? সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)  আরয করলেন- হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ
(সাঃ)! এরশাদ করুন। তিনি বললেন- আল্লাহ তাআলা বলবেন হে মোমেনগণ! তোমরা
কি আমার সাথে সাক্ষাতকে প্রিয় মনে  করতে? লোকেরা বলবে, হ্যাঁ ইয়া আল্লাহ।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বললেন, কেন আমার সাক্ষাতকে প্রিয় মনে করতে?
লোকেরা বলবে , আমরা আপনার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও মাগফেরাতের আশা রাখতাম।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। হযরত
গালেব (রাঃ) বলেন-  আমি সিরিয়া থাকাবস্থায় কায়স গোত্রের এক ব্যক্তি আমার
 কাছে আসল, তার এক যুবক ভাতিজার সাথে তার মিল ছিল না, সে তাকে বুঝাত,
উপদেশ দিতে এবং সময়ে সময়ে মারত। তারপরও সে কথা মানত না। ঘটনাক্রমে ঐ
যুবক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় পড়ে যায়, তখন চাচার কাছে লোক পাঠানো হয়, কিন্তু
সে আসতে অস্বীকার করে। শেষে পর্যন্ত আমি  গিয়ে তার চাচাকে সাথে নিয়ে আসলাম।
তার চাচা তাকে কর্কশ ভাষায় বলতে লাগল, হে আল্লাহর দুশমন! তুমি কি অমুক
অমুক বাজে করেনি? সে উত্তর দিলে - হে চাচা! এ অবস্থায় যদি আল্লাহ তাআলা
আমাকে আমার মার মার দায়িত্বে দিয়ে দেন তখন তিনি আমার সাথে কিরূপ ব্যবহার
করবেন? চাচা বলেন- তোমাকে বেহেশতে নিয়ে যাবে। তৎপর যুবক বলল- আল্লাহর
কসম, আল্লাহ তাআলা আমার মার চেয়ে অধিক মেহেরবান। একথা বলার পর যুবক
ইন্তেকাল করল। তার চাচা তাকে নিয়ে যখন কবরে অবতরণ করল এবং কবরের
তক্তা ঠিক করল, ঘটনাক্রমে একটি ইট তখন পড়ে যায়। তার চাচা ঝুঁকে দেখে সাথে
সাথে পিছে সরে যায়, আমি জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা? বলল, সারা কবর নূরে
ভরপুর, যে পর্যন্ত দৃষ্টি যায় শুধু নূরই নূর দৃষ্টিতে আসছে।
                                                          -(নূরুসসুদূর, পৃঃ ২০-২১)

           হযরত হোমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমার এক যুবক ভাগিনা অসুস্থ হলে
আমি তার আম্মাকে খবর দেয়ার পর সে আসল। আসার পর সে তার মাথার নিকটে
বসে কাঁদতে লাগল। যুবকটি আমাকে বলল-  মামা! আমার আম্মা কাঁদছেন কেন?
আমি বললাম, তোমার অসুস্থতার করণে কাঁদছে। যুবকটি বলল - আমার মার অন্তরে
আমার প্রতি ভালোবাসা নেই? আমি বললাম- নিশ্চয় আছে। যুবক বলল- আল্লাহ
তাআলা আমার উপর এর চেয়ে অধিক মেহেরবান। যখন যুবকের মৃত্যু হল, আমি
তাকে দাফন করার জন্য কবরে অবতরণ করলাম- তাকে কবরে রেখে যখন ইট 
সমান করছিলাম তখন কবরের দিকে দৃষ্টি করলাম, দেখি অনেক বড় একটা ময়দান।
আমি আমার সাথীদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরাও কি এ দৃশ্য দেখছ? তারা বলল হ্যাঁ
দেখেছি। আমি বললাম, এটা ঐ বাক্যের প্রতিফল যা সে তার শেষ অবস্থায় বলেছিল।
আর সে আল্লাহর উপর সুধারণা করেছিল।
            
             হাদীসঃ হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি হুযুর (সাঃ) -এর 
মৃত্যুর দিনকয়েক পূর্বে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ মৃত্যুবরণ করে সে
 যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা করে মরে।
            হাদীস ব্যাক্যাকারীগণ বলেন- আল্লাহর প্রতি সুধারণা সৃষ্টি হয় বেশী সৎ কাজ
দ্বারা। সুতারাং আলোচিত হাদিসের সারমর্ম হল, যে পরিমাণ সৎ কাজ করলে আল্লাহর
উপর সুধারনা হয় ঐ পরিমাণ সৎ কাজ করা। এটাই আল্লাহর প্রতি সুধারনার
অরথ।-(নুরুসুসুদূর, পৃষ্ঠা ২১-২২)
    হাদিসঃ হযরত ইব্রাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন- আগেকার লোকেরা মৃত্যুর সময়
বান্দাকে তার সৎ কাজ স্মরণ করিয়ে দেয় পছন্দ করতেন, যেন আল্লাহর উপর তার
সুধারনার সৃষ্টি হয়।
    হাদিসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন- দেখো,
তোমাদের মধ্যে দেউ যেন আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারনা ব্যতীত মারা না যায়।
কেননা, আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারনা বেহেশত খরিদের সমতুল্য। অর্থাৎ যারা
আল্লাহর প্রতি সুধারনা হয়ে গেছে তার বেহেশতে যাওয়া অনিবার্য। উল্লেখ্য সৎ কাজ
করা ব্যতীত মৃত্যুর সময় আল্লাহর প্রতি সুধারনা হয় না। এর সৎ কাজ ব্যতীত আল্লাহ
তাআলার নিকট মঙ্গলের আশা করা প্রকৃত সুধারনা নয়, বরং এটা অহংকার ও
ধোঁকাই বটে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে আমলের তওফীক দান করুন।
আমীন। (নুরুসসুদূর, পৃষ্ঠা ২২-২৩)

Comments