সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা চাই














হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কেউ নবী করীম (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস
করল- হুযুর! কোন্‌ মোমেন জ্ঞানী ? তিনি এরশাদ করলেন- যে মৃত্যুকে বেশি স্মরণ
করে আর সৎ কাজের দ্বারা পরকালের আসবাব প্রস্তুত করে। হুযুর (সাঃ) আরো
এরশাদ করেন- হুশিয়ার ঐ ব্যাক্তি যে স্বীয় নফসকে শরীয়তের বিধি- বিধানের অনুগত
করে নেয় এবং নফস থেকে হিসাব নেয়- আর ঐ সকল কাজ করে যা মৃত্যুর পর
কাজে আসবে। পক্ষান্তরে নাদান ঐ ব্যাক্তি, যে স্বীয় নফসের অনুসরণ করে এবং আল্লাহ
তাআলার থেকে সওয়াবের আকাঙ্ক্ষা করে।
                                    (নূরুসসুদূর, পৃষ্টা ১৫)
আজিজ ইবনে আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) কাউকে যখন মৃত্যুর
স্মরণ থেকে গাফেল পেতেন, তখন তার ঘরের দরজার দাঁড়িয়ে তিনবার ডেকে
বলতেন, হে লোকসকল! হে ঈমানদারগণ! মৃত্যু নিশ্চয়ই আসবে, মৃত্যু নিশ্চয়ই
আসবে। মৃত্যু রহমত, আরাম ও বরকত নিয়ে আসবে ঐ সকল লোকদের জন্য যারা
আল্লাহর বন্ধু ও পরকালের জন্য কাজ করে। মনে রেখ, সব কিছুরই সমাপ্তি আছে; আর
দুনিয়ার সমাপ্তি হল মৃত্যু। হাঁ, পার্থক্য এই- কেউ আগে যাবে আর কেউ পরে। অন্য
রেওয়ায়াতে আছে, একদা নবী করীম (সাঃ) এমন এক মজলিসের কাছ দিয়ে
যাচ্ছিলেন, যেখানে লোকেরা উচ্চস্বরে হাসছিল। হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, তোমরা
তো হাসছ, ওই বস্তুকেও স্মরণ কর যে বস্তু সকল স্বাদ ও আনন্দ উপভোগকে বিধ্বস্ত
করে ফেলে। উপস্থিত সবাই আরয করলেন- হুযুর! তা কি ? হুযুর (সাঃ) এরশাদ
করলেন- তা হল মৃত্যু।
অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, লোকেরা জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)!
শহীদগণের সাথে কি কারো হাশর হবে? এরশাদ করলেন- হাঁ, শহীদগণের সাথে ঐ
ব্যাক্তির হাশর হবে যে প্রতিদিন বিশবার মৃত্যুকে স্মরণ করে।
                                                  ( নূরুসসুদূর, পৃঃ ১৫-১৬)
আলেমগণ লেখেছেন- যে ব্যাক্তি মৃত্যুকে বেশী করে স্মরণ করবে, তাকে আল্লাহ
তাআলা তিনটি কারামতে ভূষিত করবেন। (১) শীঘ্রই তাকে তওবা করার তওফীক
দিবেন, (২) অন্তরে অল্পে পরিতুষ্ট হওয়ার সুযোগ হবে এবং (৩) এবাদতে শান্তি ও
একাগ্রতা থাকবে। আর যে ব্যাক্তি মৃত্যুকে ভুলে যাবে তার উপর তিনটি বিপদ অবতীর্ণ
হবে। (১) তওবা করার তওফীক হবে না, (২) অন্তর অল্পে পরিতুষ্ট হবে না এবং (৩)
এবাদতে অলসতা করবে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন- কবর হল আমলের সিন্দুক, সিন্দুকে কি আছে তা
মৃত্যুর পর জানতে পারবে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যেমন লোকেরা সম্পদ জমা রাখে,
অনুরূপ মানুষ ভাল-মন্দ যত কাজ করে তার সিন্দুক হল কবর।
                                                         (নূরুসসুদূর, পৃষ্টা ১৬)
হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
দুনিয়াতে উত্তম পরহেযগারী ও মিতাচার হল মৃত্যুর স্মরণ, আর উত্তম এবাদাত হল
পরকালের চিন্তা। যে ব্যাক্তিকে মৃত্যু চিন্তা পেরেশান করে ফেলে (অতঃপর সে
সৎকাজ পরায়ণ হয়ে স্বীয় আত্মশুদ্বি দ্বারা পেরেশানী থেকে মুক্তি লাভ করে। যদিও
দৈহিক কিছু অসুস্ততা থেকে যায়) তখন সে তার কবরকে বেহেশ্‌তের বাগানের ন্যায়
একটি বাগানরূপে দেখতে পাবে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন- সকল লোক ঘুমিয়ে আছে, যখন মৃত্যুবরণ করবে
তখন চক্ষু খুলবে।
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ
করেছেন- সকল ব্যাক্তিই মৃত্যুর পর আফসোস করে। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আরয
করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! লোকেরা কোন্‌ কথার উপর আফসোস করে? হুযুর
(সাঃ) এরশাদ করেন, যদি মৃত ব্যাক্তি নেক্‌কার হয়, তখন এ কথার উপর আফসোস
করে যে, কেন আরো বেশী নেকী করলাম না। আর যদি বদকার হয় তখন আফসোস
করে, কেন গোনাহ থেকে বিরত থাকলাম না।
হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন,
মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ কর। কেননা, এতে গোনাহ পরিষ্কার হয় ও দুনিয়ার বাসনা
কমে যায়। তুমি যদি মৃত্যুকে সচ্ছলাবস্থায় স্মরণ কর তবে মৃত্যু তোমাকে
আনন্দোল্লাসময় জীবনে গোনাহ থেকে বাঁচাবে। আর যদি দরিদ্রবস্থায় মৃত্যুকে স্মরণ
কর তবে মৃত্যু তোমাকে অল্পে তুষ্ট থাকায় অভ্যস্ত করবে।
                                                (নূরুসসুদূর, পৃঃ ১৬-১৭)
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)- এর
নিকট এক ব্যাক্তি এসে বলল,ইয়া রাসূলুল্লাহ! বুঝছি না, কেন আমার কাছে মৃত্যু
প্রিয় মনে হয় না। হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, মনে হয় তোমার কাছে ধন-সম্পত্তি
আছে। সে বলল- জি- হাঁ। হুযুর (সাঃ) বললেন, প্রথমে ঐগুলো আল্লহর রাস্তায় ব্যয়
করে আস। কেননা, মোমেনের অন্তর তার মালের সাথে থাকে। যদি মোমেন প্রথমে
মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে ফেলে তখন সে দুনিয়া থেকে পৃথক থাকতে ইচ্ছা
করে।
হাদীসঃ হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) বলেছেন- যে ব্যাক্তি মৃত্যুকে বেশী স্মরণ
করবে সে কখনও কারো উপর হিংসা করবে না এবং আনন্দ-উল্লাস কম করবে।
হাদীসঃ হযরত তারেক (রাঃ) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেন,
মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাক।
হাদীসঃ হযরত আবু হাযেম বলেছেন, যে কাজ করার সময় তুমি তোমার মৃত্যু
আসা পছন্দ কর না, ঐ কাজ সাথে সাথে ছেড়ে দাও। অতঃপর তুমি যে সময়ই মৃত্যু
বরণ কর না কেন, তোমার আর কোন প্রকার ভয়-ভীতি থাকবে না।
হাদীসঃ হযরত সফিয়া (রা:) থেকে বর্ণিত- এক মহিলা হযরত আয়েশা
(রাঃ)- এর কাছে এসে অভিযোগ করল যে, আমার অন্তর বেশী কঠিন। তখন হযরত
আয়েশা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি বেশী বেশী মৃত্যুকে স্মরণ কর। এটা তোমার অন্তর
নরম করে দিবে।
হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত- নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন,
আমি তোমাদেরকে কবরের নিকট যেতে বাধা দিয়েছিলাম। এখন থেকে তোমরা
কবরের কাছে যেও। কেননা, এতে অন্তর নরম হয়, চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হয়, পরকাল স্মরণ
হয়, আর বাজে আলাপ থেকে বিরত রাখে।
হাদীসঃ হযরত আবু যার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
তোমরা কবরের কাছে আসা যাওয়া করো। এতে হিংসা রোগ দূর হয় এবং উপদেশ
লাভ হয়। হুযুর (সাঃ) আরো এরশাদ করেন, জানাযার নামায পড়ো। কেননা, তাতে
যদিও আন্তরিক কিছু ব্যাথা হয়, কিন্তু ব্যাথিত ও পেরেশান ব্যাক্তি আল্লাহর আশ্রয়ে
থেকে সকল ভাল কাজের সন্ধানে থাক।
                             (নূরুসসুদূর, পৃঃ ১৫-১৯)
                                                (পৃষ্টা নং ২৮-৩১)

Comments