নির্ধারিত স্থানে আত্মা কবয করা হবে - মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে ৪

স্থানে আত্মা কবয


আল্লাহ তায়ালা 'মালাকুল আরহাম' নামক একশ্রেণির ফেরেশতা সৃষ্টি করে
রেখেছেন। শিশু মায়ের উদরে থাকাকালীন তার মৃত্যুর স্থানের মাটি এ সকল
 ফেরেশতা তার রক্ত- মাংসের সাথে মিশিয়ে দেন। ফলে জন্মের পর মানুষ যেখানেই
 ঘুরে বেড়াক না কেন, মৃত্যুর পূর্বে যেখান থেকে রক্ত- মাংসরে সাথে মিশ্রিত মাটি
নেয়া হয়েছিল সেখানে এসে উপস্থিত হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আল্লাহ
তায়ালা এরশাদ করেনঃ
উচ্চারণঃ কুল লাও কুনতুম ফি বুয়ূতিকুম লাবারাযাল্লাযীনা কুতিবা আলাইহিমুল
কাতলু ইলা মাদাজিয়িহিম।- (সূরা আলে এমরান, আয়াত ১৫৪)

অর্থঃ হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি তোমাদের ঘরেও থাকতে, তবু যার
যেখানে মৃত্যু তাকে অবশ্যই সেখানে পৌঁছাতে হত।

বর্ণিত আছে, হযরত আযরাঈল (আঃ) নবীদের সাথে সাক্ষাত করতে আসতেন।
একদিন তিনি হযরত সোলায়মান (আঃ)- এর দরবারে আসেন। সেখানে উপবিষ্ট এক 
শুশ্রী যুবকের দিকে তিনি কঠোর দৃষ্টিতে তাকালেন। যুবকটি ভয় পেয়ে গেল। হযরত 
আযরাঈল (আঃ) চলে যাওয়ার পর যুবক বলল- হে আল্লাহর রাসূল! আমার
অনুরোধ, আপনার নির্দেশে বায়ু যেন আমাকে এখনই চীন দেশে পৌঁছে দেয়।
যুবকটিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই বায়ু চীন দেশে পৌঁছে দিল। পুনরায় হযরত আযরাঈল
(আঃ) সোলায়মান (আঃ)- এর দরবারে আসার পর তাঁকে যুবকটির প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
 করার কারণ জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন- আমি ঐ দিনই চীন দেশে যুবকটির
প্রাণ সংহারের জন্য আদিষ্ট ছিলাম, তাকে আপনার দরবারে দেখে বিস্মিত হই। সুতরাং
আমি তার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি করি। সে ভয়ে আপনাকে অনুরোধ করে তাকে চীন দেশে
পৌঁছে দেয়ার জন্য। আর আমি সেদিনই সেথাই তার আত্মা সংহার করি।

এক লোক সর্বদা দোয়া করত হে আল্লাহ! আমাকে আর সূর্যের তত্ত্বাবধায়ক
ফেরেশতাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তায়ালার অনুমতি নিয়ে একদা সূর্যের তত্ত্বাবধায়ক
ফেরেশতা এসে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্জাসা করলেন- বন্ধু, আপনি কেন আমার জন্য আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উত্তরে সে বলল,আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমাকে
আপনার স্থানে নিয়ে যান আর আযরাইল (আঃ)- এর নিকট থেকে জেনে আমার মৃত্যুর
সময় আমাকে জানান। ফেরেশতা তাকে স্বীয় স্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে তাকে
বসিয়ে হযরত আযরাঈল (আঃ)- এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা বললেন। আযরাঈল (আঃ)
তাঁর ডাইরি দেখে বললেন- এ ব্যাক্তি সূর্যে অবস্থান না করা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না।
ফেরেশতা বললেন, সে তো এখন সূর্যে অবস্থান করছে। আযরাঈল (আঃ)- বললেন-
তবে এতক্ষণে আমার সহকর্মীরা তার প্রাণ সংহার করে ফেলেছে। তারা কোন কাজে
আদৌ অবহেলা করে না।

পশু-পক্ষী এবং কীট-পতঙ্গ সম্বন্ধে নবী করীম (সঃ) এরশাদ করেন- আল্লাহ
তায়ালার যিকিরই তাদের জীবন। যখন তারা আল্লাহ তায়ালার যিকির পরিত্যাগ করে
তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রাণ হরণ করেন। আযরাঈল (আঃ)- এর সাথে তাদের
কোন সম্পর্ক নেই। আরও বর্ণিত আছে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালাই জীব-জন্তুর
জীবন সংহারক। হত্যাকে হত্যাকারীর দিকে, মৃত্যুকে রোগের দিকে যেমন সম্বন্ধ করা
হয়, তেমনি মৃত্যুকে আযরাঈল (আঃ)- এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়। আল্লাহ তায়ালার
বাণীই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। যেমন এরশাদ হচ্ছেঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহু ইয়াতাওফ্‌ফাল্‌ আনফুসা হী-না মাউতিহা ওয়াল্লাতী লাম
তামুত্‌ ফি মানাহিমা ফাইউমসিকুল্লাতী কাযা আলাইহাল মাউতা ওয়া ইউরসিলুল
উখরা ইলা আজালিম্‌ মুসাম্মা, ইন্না ফী যা-লিকা লা আ-য়াতিল লিকাওমিই
ইয়াতাফাক্কারুন।

অর্থঃ আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়। আর যে মরে না তার
নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃতু অবধারিত করেন তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যদের
প্রাণ ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিশ্চ্য় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য
নির্দেশনাবলী রয়েছে। -(সূরা যুমার, আয়াত ৪২)

সুত্রঃ মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে পৃষ্ঠা ১৪-১৬

যারা আগের পোস্ট গুলো পড়েননি তারা পড়তে পারেন

Comments