মৃত্যুর কঠোরতা


















 হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মৃত্যুর সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর
সামনে একটি পাত্রে পানি ছিল, তিনি হাত ভিজিয়ে বার বার মুখে ফিরাচ্ছিলেন আর
বলছিলেন- (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিলমাউতি সাকারাতুন)
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মৃত্যু অত্যন্ত কঠিন বস্তু।
                                                       (মেশকাত শরীফ-৫৪৭)

হাদীসঃ হযরত ওহায়ব ইবনে আল্‌আরজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন ফরমান, যখন কোন বান্দার উপর আমি দয়া করতে চাই, তখন ঐ বান্দা যে
পরিমাণ গোনাহ করেছে তার প্রতিশোধ আমি তাকে অসুস্থ করে দেই এবং তার ঘরে
বালা-মসিবত পাঠাতে থাকি। তার রুজি কমিয়ে দেই যেন তার গোনাহের ক্ষতিপূরণ
হয়ে যায়। তারপরও যদি কোন গোনাহ বাকী থেকে যায় তখন তার মৃত্যুর সময় বেশী
কঠোরতা করি। অতঃপর যখন সে আমার কাছে আসে তখন গোনাহ থেকে এরূপ
পাক-প্রবিত্র থাকে যেন আজই তার মায়ের উদর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে এসেছে। আর যদি
কোন বান্দাকে আমি শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করি, তখন সে যত নেক করেছে তার
প্রতিদানে তাকে সুস্থ রাখি, তার রুজি বৃদ্বি করি, তার ঘরে নিরাপত্তা দেই, তারপরও
যদি কিছু নেক কর্ম বাকী থেকে যায় তখন মৃত্যুকে তার উপর সহজ করি। অতঃপর
সে যখন আমার নিকট উপস্থিত হয় তখন তার কাছে এরকম কোন নেক কাজ অবশিষ্ট
থাকে না যার দ্বারা সে নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করতে পারে।-
                                             (নূরুসসুদূর ফী শরহিল কুবুর, পৃঃ ২৬)

হাদীসঃ যায়দ ইবনে আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন মোমেন বান্দার এরকম
কিছু গোনাহ থাকে যা নেক আমলের বিনিময়ে ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। তখন মৃত্যুর
সময় কষ্ট দিয়ে ঐ গোনাহ ক্ষমা করে তাকে বেহেশতে পৌঁছান হয়। আর যখন কোন
কাফের নেক কাজ করে তখন মৃত্যু তার জন্য সহজ করা হয়, যেন দুনিয়াতেই তার
বদলা হয়ে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা দোযখ হয়।
হযরত আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আপন ভাতিজার মৃত্যুর সময় তার
নিকট গেলেন, ঐ সময় তার কপাল থেকে ঘাম বের হচ্ছিল। হযরত আলকামা (রাঃ)
হাসলেন, লোকেরা হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি হযরত ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) - কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন- মোমেনের রূহ
ঘাম দিয়ে বের হয় আর বদকার ও কাফেরের রূহ তার মুখ দিয়ে বের হয়। যেমন
গাধার আত্মা মুখ দিয়ে বের হয়। মোমেনের উপর গোনাহের কারণে মৃত্যুর সময়
কঠোরতা প্রদর্শন করা হয়, যেন তার গোনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়, আর কাফের ও
বদকারের উপর গোনাহের কারণে মৃত্যুর সময় নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়। অর্থাৎ
তার মৃত্যু সহজ করা হয় যেন তার নেকীর কাফ্‌ফারা হয়ে যায়।
                                           (নূরুসসুদূর ফী শরহিল কুবুর, পৃঃ ২৫-২৭)
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা বনী ইসরাইলের
কয়েকজন লোক সফরে বের হলেন। ঘটনাক্রমে একটি কবরস্থানে পৌঁছে তারা
নিজেদের মধ্যে এরকম পরামর্শ করলেন যে, এটা আমাদের জন্য বেশী ভাল হবে যদি
আমরা সবাই দু'রাকআত করে নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করি যেন
তিনি আমাদের সাথে কোন মৃত ব্যাক্তির সাক্ষাত করিয়ে দেন। তাহলে সে মৃত্যুর অবস্থা
সম্পর্কে আমাদেরকে বর্ণনা করবে। পরামর্শ অনুযায়ী তারা দোয়া করলেন। হঠাৎ এক
কবর থেকে কাল রঙয়ের এক ব্যাক্তি বের হল। তার ললাটে ছিল সেজদার চিহ্ন। সে
বলল, হে লোকসকল! তোমাদের উদ্দেশ্য কি? আজ থেকে শত বছর আমার মৃত্যুর
সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনও মৃত্যুর উত্তাপ থেকে আরাম পাইনি। তোমরা
আল্লাহর কাছে দোয়া কর তিনি যেন আমাকে অনুভূতিহীন করে দেন।
হযরত ওমর ইবনে হাবীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বনী ইসরাইলের দু'ব্যাক্তি বড়
আবেদ ছিলেন। বহু দিন যাবত এবাদাত করতে করতে তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্জার হল।
একদা তারা একমত হয়ে সিদ্বান্ত নিলেন যে, আমরা কবরস্থানে গিয়ে সেখানে থেকে
এবাদাত করব। হয়ত কোন দিন, কোন দিন কোন মৃত ব্যাক্তির সাথে কথা বলার সুযোগ
হতে পারে। অতঃপর উভয়ে কবরস্থানে থেকে এবাদাত করতে লাগলেন। একদিন এক
 মৃত ব্যাক্তি কবর থেকে বের হয়ে বলল, আমি আশি বছর  হয় মারা গিয়েছি, কিন্তু
 এখনও মৃত্যুর কষ্ট বাকী আছে।
           (নূরুসসূদূর, পৃঃ ২৭-২৮

হাদীসঃ যাহ্‌হাক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে মৃত্যুর কষ্ট সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি এরশাদ করেন- মৃত্যুর অনেক কষ্ট। সবচেয়ে কম কষ্ট হল
একহাজার তলোয়ার মারার সমান। অর্থাৎ কাউকে একহাজার তলোয়ার মারলে যে
কষ্ট হয় তার সমান। কাবুল আহবার ও ইমাম আওযায়ী থেকে বর্ণিত আছে, মৃত্যুর কষ্ট
কেয়ামত পর্যন্ত থেকে যায়।
হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মূসা (আঃ)- এর কাছে জিজ্ঞেস করল, আপনি
মৃত্যুকে কিরূপ পেলেন? তিনি জানালেন- যেমন, অনেক কাঁটাযুক্ত একটি লোহার
শলাকা আমার পেটে ঢুকিয়ে প্রত্যেক কাঁটার সাথে এক একটা করে নাড়ি পেঁচিয়ে ঐ
শলাকা আমার পেট থেকে অত্যন্ত শক্তিসহ টেনে আনা হয়েছে। ঐ সময় গায়েব থেকে
আওয়াজ আসল, হে মূসা! আমি তোমার উপর মৃত্যুকে সহজ করেছি। বর্ণিত আছে,
হযরত মূসা (আঃ)- এর রূহ যখন আল্লাহর নিকট পৌঁছে, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে
জিজ্ঞেস করেন, তুমি মৃত্যুকে কিরূপ পেলে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আমার
আত্মাকে এরূপ পেলাম যেরকম একটি জীবিত চড়ূই পাখীকে ভুনা হচ্ছে, সে মরেও
না যে আরাম পাবে, আনার রেহাইও পায় না যে উড়ে যাবে।

হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন,
মৃত্যুর সময় বান্দাকে ফেরেশতাগন চতুর্দিকে দিয়ে বেষ্টন করে রাখে। যদি এরূপ না করা
হত তবে মৃত্যুর কষ্টে বান্দা জঙ্গল ও ময়দানে দৌড়ে পালাত।
ফযল ইবনে আয়ায (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হল, মানুষ পিঁপড়ার কামড়ে
পেরেশান হয় আর মৃত্যুর সময় কেন নিশ্চিন্তে থাকে? তিনি বললেন, ঐ সময়
ফেরেশতাগণ তাঁকে আবদ্ব করে রাখে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- জিজ্ঞেস করা হল- মৃত্যুর কষ্ট ও কঠোরতা কিরূপ হয়?
হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন- সহজ মৃত্যু এরকম, যেমন কাঁটাযুক্ত ডালকে রেশমী
কাপড়ের মধ্যে রেখে টানলে প্রত্যেক কাঁটার সাথে রেশমের সুতা টুকরা টুকরা হয়ে
বের হয়।-
   (নূরুসসুদূর, পৃঃ ২৮-২৯)

একটি ঘটনাঃ হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার হুকুমে মৃত দেহকে জীবিত
করতেন। এক কাফের বলল আপনি তো নতুন মৃত দেহকে জীবিত করেন, পুরনো
কোন মৃতকে জীবিত করুন দেখি। তিনি বললেন, তুমি যার কথা বলবে তাকেই আমি
জীবিত করব। সে বলল, হযরত নূহ (আঃ)- এর ছেলে সামকে জীবিত করুন। হযরত
ঈসা (আঃ) তার কবরের কাছে গিয়ে দু'রাকাআত নামায পড়লেন এবং আল্লাহ
তাআলার কাছে দোআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জীবিত করলেন। সাম কবর
থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তার মাথার চুল ও দাড়িগুলো ঐ সময় সাদা ছিল। লোকেরা
বলল- তোমাদের যুগে তো কারো চুল সাদা হত না, তোমার চুল কিভাবে সাদা হল?
তিনি উত্তর দিলেন, যখন জীবিত করার জন্য আমাকে ডাকা হল, আমি মনে করেছি
কেয়ামত এসে গেছে, এ ভয়ে আমার চুল সাদা হয়ে গেছে। লোকেরা বলল- তুমি কত
বছর হয় মারা গেছ, তিনি বললেন- চার হাজার বছর, কিন্তু এখনও মৃত্যুর কষ্ট আমার
মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসাফ থেকে বর্ণিত, যখন হযরত আমর ইবনুল আছ
(রাঃ)- এর মৃত্যুর লক্ষণসমূহ আরম্ভ হয় তখন তাঁর ছেলে বলল- আব্বা! আপনি তো
আকাঙ্ক্ষা করতেন যে, আপনার মৃত্যুর সময় যদি কোন জ্ঞানী ব্যাক্তির সাথে সাক্ষাত
হত তবে মৃত্যুর কষ্ট সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন, এখন তো আপনিই সে জ্ঞানী
ব্যাক্তি, বলুন তো আপনার কি কষ্ট? উত্তরে তিনি বললেন- হে পুত্র, আমার নিঃশ্বাস
এত ছোত হয়ে গেছে যে, আমি সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে নিঃশ্বাস টানছি, আর কেউ যেন
আমার শরীরে বিদ্ব কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ডাল পা থেকে মাথা পর্যন্ত অনবরত টানছে।
হযরত ইবনে আবী মুলাইকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) কাবুল
আহবারকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হে আমীরুল
মোমেনীন! মৃত্যু কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ন্যায়। যখন তা শরীরে আসে তখন যেন প্রত্যেক
শিরা, উপশিরা ও জোড়ায় তাঁর কাঁটা ঢুকতে থাকে, অতঃপর একজন শক্তিশালী
ব্যাক্তি তা টানতে থাকে।
                (নূরুসসূদুর ফী শরহিল কুবুর, পৃঃ ২৯-৩০)
শাদ্দাদ ইবনে আওস বর্ণনা করেন, মোমেনের জন্য ইহকাল ও পরকালের
কষ্টসমূহের মধ্যে মৃত্যু সবচেয়ে ভয়ানক। কাউকে করাত দিয়ে চেরা বা কাঁচি দিয়ে
টুকরা টুকরা করা বা পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিয়ে সিদ্ব করার চেয়েও মৃত্যু বেশী
কষ্টদানকারী। যদি মৃত ব্যাক্তি কবর থেকে বেরিয়ে এসে মৃত্যু কষ্ট বর্ণনা করে, তবে
জগদ্বাসীর পক্ষে বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে। এমনকি ঘুম, তন্দ্রা ও আরাম- আয়েশ সব
ভুলে যাবে। কাব (রাঃ) বর্ণনা করেন, মুর্দাদের উপর মৃত্যুর কষ্ট ততদিন পর্যন্ত বাকী
থাকে যতদিন সে কবরে থাকে। অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত। মোমেনের যত কষ্ট আছে এর
মধ্যে মৃত্যুর কষ্টই কঠিন। আর কাফেরের উপর যত কষ্ট আসে এর মধ্যে সবচেয়ে
সহজ হল মৃত্যুর কষ্ট। ওয়াহাব ইবনে মোনাববেহ থেকে বর্ণিত, মৃত্যু কাফেরের
সর্বপ্রথম আর মোমিনের সর্বশেষ কষ্ট।

হাদীসঃ ওয়াসেলা ইবনুল আসকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ
করেন, তোমরা মুমূর্ষর কাছে হাযির থাক, তাঁকে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লা'হ পড়ে শোনাও
এবং বেহেশ্‌তের সুসংবাদ শোনাও। কেননা, জ্ঞানী পুরুস-মহিলাগণ ঐ সময় ভয়
পেয়ে যায়; আর শয়তান সে সময় খুবই সক্রিয় থাকে। ঐ সত্তার কসম- মালাকুল
মউতকে দেখা হাজার তলোয়ার মারার চেয়েও বেশী কষ্টকর।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন মোমেনের মৃত্যুর কষ্ট আরম্ভ হয়,
তখন তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরস্পরকে সালাম দিতে থাকে এবং বলে, কেয়ামত পর্যন্ত
আমরা একে অন্যের নিকট থেকে পৃথক হচ্ছি।

হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন-
শহীদগণ মৃত্যুর কষ্ট শুধু এতটুকু অনুভব করেন যেমন পিঁপড়া কামড় দিলে বা চিমটি
কাটলে অনুভব হয়।
মুহাম্মদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সর্বশেষ মালাকুল মউত আযরাইল (আঃ) মারা
যাবেন। পরওয়ারদেগার হুকুম করবেন, হে মালাকুল মউত! তুমি মৃত্যুবরণ কর। ঐ
সময় মালাকুল মউত এত বিকট আওয়াজে চিৎকার দিবেন যে, যদি আসমানের
ফেরেশতাগণ ও যমীনের মানুষ ঐ সময় জীবিত থাকত, সবাই ঐ চিৎকারে মারা
যেত।
  (নূরুসসুদূর, পৃঃ ৩১-৩২)

হাদীসঃ হযরত ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ
করেছেন- মোমেনের আত্মা সামান্য টান দিয়ে বের করা হবে। আর কাফেরের আত্মা
গাধার আত্মার ন্যায় খুব সহজে বের হয়ে আসবে। এর রহস্য এই যে, মোমেন কিছু কিছু
ছোট গোনাহ করে ফেলে, এজন্য মৃত্যুর সময় সামান্য কঠোরতা করা হয়, যেন তাঁর
গোনাহর 'কাফফারা' হয়ে যায়। অতএব, এটি মোমেনের জন্য শাস্তির আকৃতিতে
রহমত। আর কাফের কোন কোন সময় যেহেতু সৎ কর্মও করে, এজন্য মৃত্যু তাঁর
উপর সহজ করা হয় যেন তার ঐ সকল সৎ কর্মের প্রতিদান দুনিয়াতেই হয়ে যায়।
অতএব, এটা কাফেরের জন্য রহমতের আকৃতিতে শাস্তি। যেন পরকালে সে তার
সৎকর্মের প্রতিদান দাবী করতে না পারে।

হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,
একজন মোমেনকে তার প্রত্যেক বিস্বাদ ও অপছন্দনীয় কথার প্রতিদান দেয়া হবে।
এমনকি আত্মা সংহারের সময় মোমেন ব্যাক্তির যে বমি ও হাঁচি ইত্যাদি হয় (এগুলোর
কারণে তার যে কষ্ট হয়) এরও সওয়াব দেয়া হবে।

হাদীসঃ হযরত আলকামা ইবনে কায়স (রাঃ) তার চাচাত ভাইয়ের মৃত্যুর সময়
তার কাছে গেলেন। তিনি তার কপালে হাত দিলেন। ঐ সময় তার কপাল ঘামে ভিজা
ছিল, তিনি খুশি হয়ে বললেন, আল্লাহু আকবর, ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বর্ণনা করতেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন- যে মোমেনের মৃত্যুর (লক্ষণ) কপালের ঘাম।
প্রত্যেক মোমেনের কিছু গোনাহ বাকী থেকে যায়, মৃত্যুর সময় তার উপর কঠোরতা
করা হয় যেন ঐ কষ্টের কারণে বাকী গোনাহর শাস্তি দুনিয়াতেই হয়ে যায়।

হাদীসঃ হযরত সুফিয়ান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আগের যমানায় লোকেরা
মৃত্যুবরণকারীর কপালে ঘাম দেয়াকে পছন্দ করতেন। কোন কোন আলেম বলেছেন,
মৃত্যুর সময় মোমেনের কপালে ঘাম দেয়ার কারণ- নাফরমানীর কারণে আল্লাহর সাথে

সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে লজ্জাবোধ হয় যে, 'আমি কিভাবে নাফরমানী করা সত্ত্বেও
আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করব।' পক্ষান্তরে কাফের নাফরমানী করতে করতে অন্ধের
ন্যায় হয়ে গোনাহও দৃষ্টিতে পড়ে না আর লজ্জাবোধও হয় না। এজন্য লজ্জায় পেরেশান
হয়ে মৃত্যুর সময় তার কপালে ঘামও আসে না। উল্লেখ্য, শুধু কপালে ঘাম আসার
রহস্য এই যে, আত্মা সংহারের পূর্বে শরীরের নিম্নভাগ বোধশূন্য হয়ে শুধু উপরিভাগে
বোধশক্তি থাকে, আর লজ্জা শরমের স্থান হল চক্ষু। এজন্য চক্ষুতে লজ্জার প্রকাশ
পেয়ে কপালে গাম এসে যায়।

হাদীসঃ হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রহঃ) বলতেন- আমি চাই না যে,
মৃত্যুর কাঠিন্য আমার উপর সহজ হোক। কেননা, এটাই সর্বশেষ কষ্ট- যার দ্বারা
মোমেনের সওয়াব মিলে।
         (নূরুসসুদূর, পৃঃ ৩২-৩৩)
বর্ণিত আছে, কোন এক ব্যাক্তি হযরত কাব ইবনুল আহবার (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস
করল, কোন্‌ রোগের ওষুধ নেই? বললেন- মৃত্যু।
যায়দ ইবনে আসলাম বলেন, মৃত্যুর একটি রোগ, যার ওষুধ আল্লাহ তাআলার
সন্তষ্টি। অর্থাৎ যখন কেউ একথা জানতে পারে যে, আমার উপর আল্লাহ সন্তষ্ট আছেন,
তখন মৃত্যুর সময় যত কষ্টই হোক না কেন তা সহ্য করা সহজ এবং ঐ কষ্ট
তখন আর কষ্টই মনে হয় না।

হাদীসঃ হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, আমি
একদা হঠাৎ আয়েশা (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, মৃত্যু কি বিষণ্ণতার বস্ত? তিনি
বললেন, কেন তা বিষণ্ণতা হবে? আমি হুযুর (সঃ) থেকে শুনেছি- মোমেনের জন্য
মৃত্যু আরামের বস্ত। হাঁ, বদকারের জন্য অত্যন্ত দুঃখ, বেদনা ও আফসোসের বিষয়।

 সূত্রঃ মৃত্যুর আগে ও হাসরের পরে
পৃঃ ২৩-২৮

Comments