মুমেন ও কাফেরের আত্মা কবজের ব্যবধান

























হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, এরশাদ করেছেন-
যখন মোমেনের মৃত্যুর সময় হয় তখন তার কাছে আকাশ হতে ফেরেশতার এক জামাআত আসে, যাদের মুখমণ্ডলে সূর্যের ন্যায়
উজ্জ্বল। তাদের সঙ্গে বেহেশতের কাফন ও সুগন্ধি থাকে। তারা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দূরে বসে যান। অতঃপর মালাকুল মউত মুর্দারের
মাথার দিক দিয়ে বসেন এবং বলেন হে পবিত্রাত্মা- আল্লাহ পাকের মাগফেরাত এবং সন্তুষ্টির দিকে ফিরে চলুন। অতঃপর ঐ
আত্মা আত সহজে বের হয়ে আসে, যেমন পানিভর্তি মশক হতে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরতে থাকে। বাহ্যত যদিও কিছুটা কষ্টের
মধ্যে তার জান কবয হতে দেখা যায়, তাতে আত্মার উপর নয়, শরীরের উপরই কিছু কষ্ট হয়।
অতঃপর মালাকুল মউদ আত্মাকে সাথে সাথে বেহেশতী কাফন ও সুগন্ধি মধ্যে জড়িয়ে নেন। তখন সে আত্মা হতে তীব্র সুগন্ধি
বের হয়ে চতুর্দিকে ছরিয়ে পড়ে। অতঃপর আত্মাকে নিয়ে মালাকুল মউত ঊর্ধ্বজগতের দিকে উঠতে থাকেন।
ফেরেশতাদের যেসব এলাকা দিয়ে আত্মা নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাস করেন- এ পবিত্রাত্মা কার?
মালকুল মউত উত্তরে সকল গুনাবলিসহ মৃতের পরিচয় দিতে থাকেন। এভাবে তিনি সে আত্মাকে নিয়ে প্রথম আকাশে পৌঁছেন।
অতঃপর তথা হতে আকে আকে সপ্তমাকেশে পৌঁছেন। তথায় আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, তার নাম ইল্লিয়ীনে লেখে দাও এবং কবরে প্রশ্নোত্তরের জন্য
পুনঃ যমিনে ফেরত নিয়ে যাও । কেননা, আমি তাকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি এবং মাটিতেই তাকে পুনরায় পাথাচ্ছি; আবার মাটি হতেই পুনরায় উঠাব।
 অতঃপর সে আত্মা পুনরায় শরীরে স্থাপন করে কবরে রাখা হয়।
এ সময় তার নিকট দু'জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন- তোমার প্রভু কে? আত্মা উত্তরে বলে, আমার প্রভু আল্লাহ তাআলা।
অতঃপর তারা প্রশ্ন করেন, তোমার দ্বীন কি? আত্মা উত্তরে বলে, আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর জিজ্ঞেস করেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- কে
এবং তার সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? আত্মা উত্তর বলে, তিনি মুহাম্মদুর রাসূল্লাহ (সাঃ) । বলা হবে, তুমি কি করে জানলে? আত্মা বলবে, আমি কোরআন সরিফ
পরেছি এবং তার উপর দ্বির বিশ্বাস করেছি তা সত্য বলে সিকার করে নিয়েছি। অতঃপর আকাশ হতে গায়েবি আওয়াজ হবে আমার বান্দা সত্য বলেছে। তাকে
বেহেশতী পোশাক পরিয়ে দেও এবং বেহেশতি বিছানা বিছিয়ে দাও । আর তার কবরে যেন বেহেশতে সুগন্ধি হাওয়া পৌছাতে থাকে। অতঃপর দিগন্ত পর্যন্ত কবর
কে প্রস্থ করে দেওয়া হয়। অতঃপর আত্মার নিকট উত্তম খোশবুদার পোশাক পরিহিত একজন সুন্দর পুরুষ আসেন এবং সু সংবাদ সুনান যে আজ ঐ দ্বীন যে দ্বীন
সম্পর্কে তোমার সাথে ওয়াদা করা হত। আত্মা ঐ নবাগত সুন্দর পুরুষকে জিজ্ঞাস করবে, তুমি কে উত্তর হবে, আমি তোমার সারা জীবনের নেক আমল । আত্মা
তখন বার বার বলতে থাকবে হে আমার প্রতি পালক সিঘ্র কিয়ামত কায়েম করুন যেন আমি আমার পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজনের সাথে মিলিত হতে পারি ।
হুযুর আক্রাম (সাঃ) এরশাদ করেন যখন কাফেরের মৃত্যুর সময় হয় তখন কালো চেহেরার ফেরেস্থাগন তার কাছে আসেন। তাদের হাতে চট থাকে। তারা মুমূর্ষু
ব্যক্তির দৃষ্টির শেষ সিমানায় বসেন অতঃপর মালাকূল মউত তার মাতার দিকে এসে বসেন এবং তাকে সম্ভোদন করে বলেন হে পাপিষ্ট আত্মা আল্লাহ পাকের
গজবের দিকে ভেরিয়ে আয় । শুনা মাত্র খবশ আত্মা শরীরের ভীতর এদিক সেদিক দৌড়াতে থাকে । মালাকূল মাউদ তার আত্মাকে এমন ভাবে বেড় করে যেমন
একটি ভিজা তূলার বালিশ হতে এমন একটি শলাকা বেড় করা হয় জাতে অজস্র পীরের ফলা উলটো মুখী করে রাখা রয়েছে তা দ্বারা মালাকূল মউদ জবর দস্তির
সাথে সলাখা বিদ্দ করে খচিয়ে টেনে আত্মাকে  শরীর থেকে বেড় করে নিজের হাতে নিবেন। তৎক্ষনাক অন্য ফেরেশতা এ খবিশ আত্মা কে চটে জড়িয়ে নিজেদের
হাতে নিয়ে নিবেন তখন সে চট হতে পচা মরার দূর গন্দ বেড় হতে থাকে এবং সারা জগতে এ দূর গন্দ ছরিয়ে পরে
ফেরেশতা গন এ আত্মা নিয়ে আকাশের দিকে উটতে থাকেন । যখনই অন্য কোন ফেরেশতার পাশ দিয়ে নিয়ে জান তারা জিজ্ঞেস করেন, এ কোন খবিশ আত্মা?
উত্তরে তারা সব চেয়ে খারাপ পরিচয় সহকারে বলেন, অমুকের ছেলে অমুক। এভাবে তারা প্রথম আঁকাস পর্যন্ত নিয়ে জান এবং আঁকাসের দরজা খোলার জন্য
অনুরুদ করলে তা খোলা হয়না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন তাদের জন্য আঁকাসের দরজা সমূহ খোলা হবেনা এবং তারা কখন বেহেশতে প্রবেশ করবে না,
যতক্ষণ না সূচের ছিদ্র দিয়ে একটি উট চলে যায়।''- (সূচের ছিদ্র দিয়ে উটও যাবে না। আর এরাও বেহেশতে প্রবেশ করবে না।)
এ সময় আল্লাহ তাআলা বলবেন, তারা নাম সিজ্জিনে লেখে দাও। ফেরেশতাগণ আখাশ হতেই সে আত্মাকে যমিনের নীচে সিজ্জিনের দিকে ছুঁড়ে মারেন।
অতঃপর হুযুর (সাঃ) কোরআন পাকের এ আয়াত তেলাওয়াত করেনঃ


উচ্চারণঃ ওয়া মাই ইউশরিক বিল্লাহি ফাকাআন্নামা খাররা মিনাস্ সামা-ই ফাতাখতাফুহুত তাইরু আও তাহবি বিহির রিহু ফী মাকানিন সাহিক।
অর্থঃ এবং যেব্যক্তি আল্লাহ পাকের সাথে শেরক করল সে যেন আঁকাস থেকে ছিটকে পরল। অতঃপর আকাশে পাখী তার শরীরের গোশতগুলো খেয়ে ফেলল কিম্বা
হাওয়া তাকে দুরদুরাস্নতে নিয়ে ফেলে দিল।
অতঃপর তার আত্মাকে শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তার কাছে দু'জন ফেরেশতা আসেন, তাকে বসিয়ে ফিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রভু কে? সে উত্তর করে হায় হায়!
আমি এ সম্প্রকে কিছুই জানি না। আমার জানা নেই। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি ছিল? আবারও সে আকই উত্তর দেয়, হায়! আমার জানা নেই। তারপর
জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যাকে তোমাদের প্রতি পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? তদুত্তরেও সে বলবে হা! হায়! এটা তো আমার জানা নেই। প্রশ্নোত্তর শেষ হলে
আঁকাস থেকে আওয়াজ আসবে- সে মিথ্যা বলছে। তার নীচে আগুন বিছিয়ে দাও এবং তার জন্য দোযখের দরজা খুলে দাও।  দোযখের দরজা খোলা হলে কবরে দমকা গরম হাওয়া
আসতে থাকবে। অতঃপর তার কবর সংকীর্ণ করে দেয়া হবে। ফলে দু'পাশের পাঁজরের হাড় পরস্পরের মধ্যে ডুকে যাবে। অতঃপর কবরে কুশ্রী চেহারার নিকৃষ্ট
জামা পরিহিত দুর্গন্ধময় শরীরের একজন লোক প্রবেশ করে বলবে, মহাবিপদের সংবাদ শোন। এটা সে দ্বীন যে সম্প্রকে তোমার সাথে ওয়াদা করা হয়েছিল। সে বলবে
তুমি কে? বাস্তবিক তোমার চেহারা দেখে মনে হয় তুমি কোন বিপদের সংবাদ বহনকারী। সে বলবে- আমি তোমার বদ আমল, সামনে তোমার আরও ভয়ঙ্কর
আযাব রয়েছে। আত্মা ভয়ে ভীত হয়ে ভাববে, কেয়ামত কায়েম হলে না জানি আরো কত আযাব ও গযবে পতিত হতে হয়। তখন সে বলবে, আয় আল্লাহ! কেয়ামত যেন
কায়েম না হয়। অন্য রেওয়ায়াতে আছে, কাফেরের আত্মা সব রগসহ বের হয় এবং আকাশ ও যমিনে এবং তৎমধ্যবর্তী যত ফেরেশতা আছেন সবাই এ খবিস আত্মার প্রতি লানত
করতে থাকেন।  তার জন্য আকাশের করজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং প্রত্যেক করজার প্রহরীগণ এ দোআ করেন, আয় আল্লাহ! তাকে আমাদের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাবেন না।- (মেশকাত শরীফ)

সূত্রঃ  মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে
 আর আগের ও পরের পৃষ্ঠা গুলো না পড়ে থাকলে এখানে ক্লিক করে পড়ুন

Comments