মৃত্যুর সময় শয়তানের ধোকা থেকে বাচার উপায়











মৃত্যুর সময় শয়তানের ধোকা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য হুযুর (সাঃ)- এর হাদীস
ও কোরআনের আয়াত থেকে কতিপয় উপায় জানা যায়। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় উপায়
হল ঈমানের উপর মজবুত থাকা। আর দ্বিতীয় হল ইস্তেকামাত অর্থাৎ ঈমানের উপর
অবিচল থাকা। এ দু'টো উপায় উপরে আলোচিত আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত। আর যেহেতু
ইস্তেকামের স্তর বিবিধ- এজন্য ইস্তেকামাতে যে যত উপরে হবে সে ঐ পরিমাণ
শয়তানের ধোকা থেকে বেশী নিরাপদ থাকবে।
ইস্তেকামাতের নিম্মের স্তর হল জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঈমানের উপর অটল
থাকা। কেননা, গোনাহের কারণে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের সাহায্যের আশা
করা যায়। কিন্তু কোন কোন গোনাহের কারনে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের
সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনাও আছে। আর ইস্তেকামাতের সর্বোচ্চ স্তর হল
সর্বপ্রকার গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা, তাকওয়ার উপর চলা। আর ইস্তেকামাতের
মধ্যম স্তর হল। যদি কখনও অবহেলার কারণে গোনাহে লিপ্ত হয়েও যায়, তখন
আল্লাহর আযাবের কথা খেয়াল করে সাথে সাথে তওবা করে ফেলা। তৃতীয় উপায়
হল, গোসল ফরয অবস্থায় গোসল করতে দেরী হলে কমপক্ষে সাথে সাথে অযু করে
নেয়া, চতুর্থ উপায় হল, স্বীয় আত্তমা, পোশাক ও ঘরকে এ রকম জিনিস থেকে পবিত্র
রাখা যার কারণে রহমতের ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করে না। যেমন, ফটো, কুকুর,
গোসল ফরযওয়ালা মানুষ, ঐ সকল অলংকার, যেগুলোতে আওয়াজ হয় ইত্যাদি।-
                                                                      (মাশারেকুল আনওয়ার, পৃঃ ১০)
পঞ্চম উপায় হল পিতামাতার কথামত চলা। হাদীস শরীফে আছে, এক ব্যাক্তি
হুযুর (সাঃ) এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, হুযুর! আমাদের এলাকায় একটি
ছেলে মৃত্যুমুখে পতিত, তাকে 'লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ' পড়তে বলা হলে সে পড়তে
পারে না। হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, সে পূর্বে থেকেই কালেমা পড়ায় অভ্যস্ত নয়?
লোকেরা আরয করল, হুযুর! সে আগে সব কালেমা পড়ত! হুযুর (সাঃ) বললেন,
তাহলে এখন পড়তে না পারার কারণ কি? হুযুর (সাঃ) নিজে তাশরীফ নিয়ে
ছেলেটিকে কালেমা তালকীন করলেন, সে বলল, কালেমা পড়ার আমার শক্তি নেই।
হুযুর (সাঃ) বললেন কেন? ছেলেটি বলল, আমি আমার আম্মার কথা শুনতাম না।
অতঃপর হুযুর (সাঃ) তাঁর আম্মার নিকট থেকে তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করালেন, তারপর
তাঁর মুখ খুলে গেল এবং কালেমা তাইয়্যেবা পড়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেলেন।-
  (নূরুসসুদূর)
ষষ্ঠ উপায় হল, মৃত্যুর সময় অন্যান্যা লোকদের মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যাক্তিকে
কালেমা 'লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ' তালকীন করানো।
মাসআলাঃ মুমূর্ষ ব্যাক্তিকে 'লা ইলা-হা-ইল্লাল্লাহ' পড়তে না বলা উত্তম; বরং
তাঁর কাছে বসে যে কেউ পড়বে। কারণ, হয়ত সে মৃত্যু কষ্টের কারণে পড়তে
অস্বীকার করতে পারে, ফলে তাঁর ঈমানই চলে যাওয়ার আশংকা হবে। নাঊযুবিল্লাহ।-
                                                                 (কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড,পৃঃ ৭৮)
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যখন তোমরা মৃত্যুশয্যায় শায়িত
ব্যাক্তির কাছে বস, তখন তাকে বারবার কালেমা পড়ার জন্য বলে বিরক্ত করো না।
কারণ, সে কখনও কালেমা মুখে পড়ে ফেলে আবার কখনও হাতে ইশারা করে,
আবার কখনও অন্তরে অন্তরে বলে- এটাই যথেষ্ট।-
                                 (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৭৯)
শেখ আবদুল বাকী বলেন, যে ব্যাক্তির বাকশক্তি বন্ধ হয়ে যায় বা অসুস্থতার
কারণে বেহুশ হয়ে যায় এবং কালেমা পড়তে অক্ষম হয়, তখন তাঁর পূর্বের অবস্থার
উপর বর্তমান অবস্থা বিবেচিত হবে। যদি সে পূর্বে কালেমা পাঠকারী হয় তবে এখনও
কালেমা পাঠকারী বিবেচিত হবে।-
                        (মাশারেক, পৃঃ ৭২)
মাসআলাঃ যদি মৃত্যুশয়্যায় শায়িত ব্যাক্তি একবার লা ইয়ালা- হা ইল্লাল্লাহ পড়ে ফেলে, তখন পনরায় লা ইলা- হা ইল্লাল্লাহর তালকিন করার বা মুখে
বলার প্রয়োজন নেই। হা, তালকিনের পড় যদি ঐ ব্যক্তি কোন কাজে লিপ্ত হয় তখন পুন্রাত তালকিন করা উচিত।
কোন কোন হাদিসের বর্ণনায় আছে, কালেমায়ে তাইয়্যেবার তালকিনের সাথে এ বাক্যও বলতে ববেঃ.................................
উচ্চারণঃ আসসুবাত আসসুবাত ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থাৎ, নিজে সঠিক ধর্মের উপর আঁটল থাক, আর সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত তা সম্ভপ নয়। সপ্তম উপায়- যা শয়তানের
ধোঁকা থেকে নিরাপদ রাখে এবং মৃত্যুর কষ্টসমূহ সহজ করে দেয় তা হচ্ছে, মুমূর্ষু  ব্যক্তির নিকট কিছু কোরআন শরীফ বিশেষত সূরা
ইয়াসীন তেলওয়াত করা।
হাদিস শরিফে আছে, যখন কোন মৃত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর মৃত্যু সহজ করে দেন।- (ইবনে আবিদ্দুনিয়া ও দায়লামী)।

 সূত্রঃ  মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে
 আর আগের ও পরের পৃষ্ঠা গুলো না পড়ে থাকলে এখানে ক্লিক করে পড়ুন

Comments