মুমূর্ষু ব্যক্তির অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের বাধাদান -মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে ৬

আসসালামু আলাইকুম। ধারাবাহিক ভাবে মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে বইটি লিখে জাচ্ছি আশাকরি আপনারা নিয়মিত প্রতিটি পর্ব পড়বেন।


হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, বান্দার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে আযরাঈল (আঃ)
আত্মা সংহার করার জন্য তার মুখের দিকে এগিয়ে আসেন। তখন মুখ বলে, হে
আযরাঈল! আর অগ্রসর হয়ো না। কারণ, আমার দ্বারা এ বান্দা সর্বদা আল্লাহ তায়ালার
যিকির করেছে, সুতরাং তোমার আশা পূর্ণ হবে না। হযরত আযরাঈল (আঃ) তখন
আল্লাহর কাছে আরয করবেন হে প্রভু! তোমার বান্দা তো একথা বলে- এখন আমি
কি করব? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, অন্য পথে অগ্রসর হও। তখন আযরাঈল (আঃ)
হাতের দিকে অগ্রসর হবেন। হাত বাধা দিয়ে বলবে- ওহে মৃত্যুদূত! অন্য পথে অগ্রসর
হও। কারণ, আমি আল্লাহ তায়ালার পথে দান করেছি, তাঁর দিন প্রচারে অসি চালিয়েছি,
লেখনি দ্বারা দিনের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছি। অতঃপর তিনি পায়ের দিকে অগ্রসর হওয়া
মাত্র পা বাধা দিয়ে বলবে-ওহে! এ পথে নয়। আমি হেঁটে জুমআ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের
জামাআয়াতে এবং রোগীর সেবা- যত্নের জন্য গিয়েছি। দ্বীন শিক্ষা ও উপদেশ দানের জন্য আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের কাছে গিয়েছি। এখানেও বাধা পেয়ে
তিনি কানের দিকে অগ্রসর হবেন। কর্ণদ্বয় বাধা দিয়ে বলবে হে আযরাইল! আর ন,
ক্ষান্ত হও। আমার দ্বারা আল্লাহর এ বান্দা পবিত্র কোরআন ও আল্লাহর যিকির শ্রবণ
করেছে। তারপর তিনি চোখের দিকে অগ্রসর হলে চক্ষুদ্বয় বলবে- আল্লাহর এ বান্দা
আমার দ্বারা পবিত্র কোরআন, আলেমা- ওলামা ও অলীদের মুখ দর্শন করেছে। অতএব,
আমার দিকে থেকে তোমার আক্রমন বন্ধ কর।

এভাবে সর্বদিকে থেকে আযরাইল (আঃ) তার কাজে বাধা পেয়ে আরয করবেন হে
আল্লাহ! তোমার বান্দা যে আমাকে কোন দিক থেকেই কৃতকার্য হতে দিচ্ছে না। এখন
আমি কি করি ? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, না কোন প্রকারেই তুমি এভাবে  দ্বার  
করতে পারবে না। বরং তুমি তোমার হাতের তালুতে আমার নাম লেখে আমার বান্দার
চোখের সামনে ধর। তারপর দেখ কি হয় ?

হযরত আযরাইল (আঃ) হাতের তালুতে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম লেখে
বান্দার চোখের সামনে ধরতেই তার প্রাণ আল্লাহ নামে পাগল হয়ে সকল প্রকার
জ্বালা- যন্ত্রনা ভুলে গিয়ে অনন্তে বিলীন হয়ে যাবে। যারা অন্তরে আল্লাহ প্রেমের মোহর
অঙ্কিত করতে পেরেছেন তারাই শাস্তি, যাতনা, ক্লেশ হতে পরিত্রাণ পেয়েছেন। আল্লাহ
তায়ালা এরশাদ করেন-

উচ্চারণঃ উলা- ইকা কাতাবা ফী কুলূবিহিমুল ঈমান্‌ (সূরা মুজাদালাহ- ২২)
অর্থঃ তাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা ঈমান লেখে দিয়েছেন।

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

উচ্চারণঃ আফামান শারাহাল্লাহু সাদরাহু লিল্‌ইসলামি্‌ ফাহুয়া আলা নূরিম
মির্‌রাব্বিহ।

অর্থঃ আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার
পালনকর্তা পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে, ( সেকি তার সমান যে এরূপ
নয়) ? (সূরা যুমার, আয়াত২২)

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যখন বান্দার প্রাণবায়ু বের হতে থাকে, তখন আল্লাহ
তায়ালার নির্দেশে কেউ উচ্চ স্বরে বলতে থাকে, ওহে আযরাইল! ক্ষান্ত হও, তাকে
একটু বিশ্রাম করতে দাও। আত্মা যখন বক্ষে এসে যায়, তখন আবার ডেকে বলে,
ক্ষান্ত হও। তাকে আরো একটু আরাম করতে দাও। তারপর আত্মা যখন কণ্ঠদেশে এসে
যায় তখন বলা, হে যমদূত! তাকে জীবনের সাথী অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ হতে বিদায় নেয়ার
একটু সময় দাও। তখন তার হাত, পা, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা ইত্যাদি অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ তাকে
চিরবিদায় কিয়ে বলে, কেয়ামত পর্যন্ত তোমার উপর আল্লাহর অসীম করুণা বর্ষিত
হোক। এরপরই এসে চরম পরিণতি। হাত- পা নিস্তেজ হয়ে যায়, চক্ষু জ্যেতিহীন
হয়ে পড়ে, কর্ণদ্বয় শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। আর দেহরাজ্য আত্মাহীন অসাড় হয়ে
পড়ে থাকে। 



সুত্রঃ মৃত্যুর আগে ও হাশরের পরে পৃষ্ঠা ১৭-১৮

যারা আগের পোস্ট গুলো পড়েননি তারা পড়তে পারেন


Comments