আরাফ ও আরাফবাসীর পরিচয়

মসুলমানদের মধ্যে যারা আল্লাহ্‌র রাসুল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, কেয়ামত, আখেরাত, বেহেশত দোযখ প্রভিতিতে বিশ্বাস করত, মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার ও পরোপকার করত, কিন্তু নামায পড়ত না, রোযা রাখত না, এ শ্রেনীর লোকদেরকে বেহেশত ও দোযখের মধ্যবর্তী আরাফ নামক স্থানে রাখা হবে। তাদেরকে দোযখে বা বেহেশতে দাখিল করা হবে না। ফলতঃ আরাফ দুনিয়ার ন্যায় সুখ-দুঃখ মিশ্রিত স্থান হবে, তাতে আয়েশা-আরাম, দুখ-কষ্ট, শোক-আনন্দ, ভাবনা-চিন্তা পরিশ্রম প্রভৃতি সবাই আছে। কখনও দোযখ হতে প্রচন্ড উত্তাপ এসে তাদেরকে , আযাব দিবে। আবার কখনও বেহেশত হতে শীতল হাওয়া প্রবাহিত হয়ে তাদের শান্তি দিবে। কখনও বেহেশতের সুগন্ধ এসে তাদের মন-প্রাণ প্রফুল্ল করে তাদেরকে উদারান্নের সংস্থান করতে হবে, কখনও বিনা শ্রমেই সুখাদ্য প্রাপ্ত হবে।

আরাফ ও আরাফবাসীর পরিচয়
আরাফ ও আরাফবাসীর পরিচয় 

ফলতঃ বহু প্রকারের নেকী সঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও শুধু নামায রোযা পালন না করার কারণে এ শ্রেণীর লোকের বেহেশত নসীব হবে না। চিরদিন আরাফে থাকবে।
পবিত্র কালামে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন-
উচ্চারণ- ওয়া বাইনাহুম হুজাবুও ওয়া আলাল আ-রাজি রিজালুই ইয়ারেফূনা কুল্লাম বিসীমাহুম।
অর্থঃ- উভিয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে, তাদের প্রত্যেককে চিহ্ন দ্বারা চেনা জাবে।-(সুরা আরাফ-৪৭)
তাফসিরবিদগন লেখেন, সূরা হাদীদের আয়াত থেকে আরাফের সঠিক ব্যাখ্যা এরূপ পাওয়া যায় যে, হাশরের ময়দানে তিনটি দল হবে-(এক) সুস্পষ্ট কাফের ও মোশরেক। এদের পূলসেরাতে চালার প্রশ্নই উঠবে না, এর আগেই জাহান্নামের দরজা দিয়ে এদেরকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। (দুই) মোমেনের দল। তাদের সাথে ঈমানের আলো থাকবে। (তিন) মোনাফেকের দল। এরা দুনিয়াতে মুসলমানদের সাথে লাগা থাক্ত। সেখানেও প্রথম দিকে সাথে লাগা  থাকবে এবং পুলসেরাতে চলতে শুরু করবে। তখন একটি ভীষণ অন্ধকার সবাইকে ঘিরে ফেলবে। মোমেনরা ঈমানের  আলোতে সামনে এগিয়ে যাবে। মোনাফেকরা ডেকে ডেকে তাদেরকে বলবেঃ একটু  থাম, আমারাও তোমাদের আলো দ্বারা উপকৃত হব। এতে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে জনৈক ফেরেশতা বলবেঃ পিছনে ফিরে যাও এবং সেখানেই আলো তালাশ কর। একথার উদ্দেশ্য, আলো হচ্ছে ঈমান ও সৎ কর্মের। এ আলো হাসিল করার স্থ্বান পিছনে চলে গেছে। যারা সেখানে ঈমান ও সৎ কর্মের মাধ্যমে এ আলো অর্জন করেনি তারা আজ তা দ্বারা উপকৃত হবে না। এমতাবস্থায় মোমেন ও মোনাফেকদের মধ্যে একটি প্রাচীর বেষ্টনী দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। এতে একটি দরজা থাকবে। দরজার বাইরে কেবলই আযাব দৃষ্টিগোচর হবে এবং ভিতরে মোমেনরা থাকবে। তাদের সামনে আল্লাহ্‌র রহমত এবং জান্নাতের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করবে।
সূত্রঃ (মৃত্যুর আগে ও হাসরের পরে, পৃঃ ১১১-১১২)

বাকি পর্ব গুলো পড়ুন

Comments